Thursday, January 30, 2025

ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি জামাইয়ের কাণ্ড: ভারতীয় শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে নাগরিকত্বের চেষ্টা!

Share

ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি জামাইয়ের কাণ্ড

মেহের শেখ, একজন বাংলাদেশি নাগরিক, প্রায় সাত বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। মুর্শিদাবাদের রানিনগর এলাকায় জাল নথিপত্র তৈরি করে তিনি সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তোলেন। স্থানীয় এক তরুণীকে বিয়ে করে সীতানগরে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু, সম্প্রতি ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডের তদন্তে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। মেহের তার শ্বশুরকে নিজের বাবা হিসেবে দাবি করে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করানোর চেষ্টা করেছিলেন।

গ্রেফতার এবং পুলিশের তদন্ত

গত শুক্রবার রাতে, মেহের শেখের শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে, জাল নথি ব্যবহার করে তিনি শুধু ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের চেষ্টা করেননি, বরং ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, মেহের শেখকে জেরা করে ভুয়ো পাসপোর্ট-সহ জাল পরিচয়পত্র তৈরির চক্র সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে।

ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডের পটভূমি

কলকাতার ভবানীপুর থানায় গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি ভুয়ো পাসপোর্ট সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জাল নথিপত্রের মাধ্যমে ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার একটি চক্র চলছে। এই চক্রের মূল কাজ হলো বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনকে ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধতা দেওয়ার ভান করা। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের লালবাজার দফতর বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ইতিমধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং হুগলির মতো জেলা থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের মতে, এই চক্রটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে বিশেষভাবে সক্রিয়। তারা অবৈধ অভিবাসীদের জন্য জাল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং পাসপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছে।

পাসপোর্ট জালিয়াতির বিস্তার

পাসপোর্ট জালিয়াতি তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই নতুন তথ্য উঠে আসছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের জড়িতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন। কলকাতা পুলিশের একজন প্রাক্তন সাব-ইন্সপেক্টরকেও এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

তদন্তে দেখা যাচ্ছে, এই জালিয়াতি চক্রটি শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমগ্র রাজ্যে এর প্রভাব বিস্তৃত। সীতানগরের ঘটনাটি এই চক্রের একটি উদাহরণ মাত্র। পুলিশের মতে, মেহের শেখের মতো আরও অনেকেই এ ধরনের পন্থা অবলম্বন করে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছেন।

সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এই ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিএসএফ ইতিমধ্যেই কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। সম্প্রতি নদিয়ার সীমান্ত এলাকায় মাটি খুঁড়ে দুইটি বাঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে, যা অনুপ্রবেশকারীদের ব্যবহারের প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সমাজের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা সামনে আসার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সীমান্ত এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। পাশাপাশি, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।

শেষ কথা

মেহের শেখের গ্রেফতারি এবং তার সঙ্গে জড়িত চক্রের উদ্ঘাটন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইনের কঠোর বাস্তবায়নের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। তবে, আরও অনেক চক্র সক্রিয় রয়েছে, যা ভাঙতে প্রশাসনের ধারাবাহিক তৎপরতা প্রয়োজন।

নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্তে মাটি খুঁড়ে মিলল জোড়া বাঙ্কার! ২ বিঘা জমি ঘিরে রেখে তদন্তে বিএসএফ

Read more

Local News