Thursday, May 8, 2025

ভোজপুরি গান ঘিরে রক্তাক্ত বিবাদ! কনের ভাইকে কুপিয়ে খুন, পালালেন বর

Share

ভোজপুরি গান ঘিরে রক্তাক্ত বিবাদ!

বিয়ের আসরে আনন্দের বদলে বয়ে এল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ডিজে-তে ভোজপুরি গান বাজানো ঘিরে শুরু হওয়া তর্ক শেষ পর্যন্ত কনের ভাইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত গড়াল! অভিযোগ, বরযাত্রীর হাতে খুন হতে হল কনের ভাইকে, গুরুতর আহত আর এক ভাই। বিয়ের মঞ্চে ঘটে যাওয়া এই নারকীয় কাণ্ডের পর থেকেই বেপাত্তা বর ও তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্য। উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরের পাকৌলি লালা গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।

ভোজপুরি গান ঘিরে শুরু বিবাদ

পুলিশ সূত্রে খবর, পাকৌলি লালা গ্রামের বাসিন্দা লালমোহন পাসোয়ানের মেয়ে সঞ্জনার সঙ্গে দেওরিয়ার যোগিয়া রুদ্রপুর গ্রামের রাহুলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বরযাত্রী বরের সঙ্গে কনের বাড়িতে পৌঁছয়। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ‘দ্বারপূজা’ ও ‘জয়মালা’-র মতো বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানও হয়ে যায়। কিন্তু রাত ১০টা নাগাদ হঠাৎ করেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিয়ের আসরে ডিজে-তে ভোজপুরি গান বাজানো হচ্ছিল, যা কনের পরিবারের একাংশের পছন্দ হয়নি। তাঁরা চাইছিলেন গান বন্ধ হোক বা অন্তত অন্য ধরনের গান বাজানো হোক। কিন্তু বরপক্ষের লোকজন সে দাবি মানতে চাননি। উল্টে তাঁদের বক্তব্য ছিল, বরযাত্রীরা যা খুশি বাজাবেন, তাতে কনের পরিবার বাধা দিতে পারে না। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি এবং পরে মারামারি শুরু হয়।

তীব্র সংঘর্ষ, ধারালো অস্ত্রের কোপ

তর্কাতর্কি ধীরে ধীরে চরমে ওঠে। অভিযোগ, বরযাত্রীর কয়েকজন সদস্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে কনের পরিবারের লোকজনের উপর চড়াও হয়। কনের দুই ভাই— অজয় পাসোয়ান ও সত্যম পাসোয়ান এবং তাঁদের এক আত্মীয় রমা পাসোয়ানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফেলা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিন জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের গোরক্ষপুরের বড় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি— সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অজয়ের। সত্যমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

বরের পলায়ন, তদন্তে পুলিশ

ঘটনার পরই খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দেখা যায়, বিয়ের আসর কার্যত ফাঁকা। বর রাহুল এবং মূল অভিযুক্তরা পালিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই আট জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্তদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, রাহুল ও সঞ্জনার আসলে গত বছরই বিয়ে হয়েছিল। তবে রাহুলের বাবা প্রয়াত হওয়ায় সেবার বিয়ের বড় কোনো আয়োজন করা হয়নি। তাই এ বছর একসঙ্গে অনুষ্ঠান করে বিয়ের উৎসব পালন করছিল দুই পরিবার। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই বদলে গেল কান্নায়, শোকের ছায়ায়।

কেন এমন নৃশংসতা?

একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে কীভাবে বিয়ের আসরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হল, তা ভেবে হতবাক গ্রামবাসীরা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, বর ও কনের পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই কিছু অসন্তোষ ছিল, যা বিয়ের দিন চরমে ওঠে। তবে গান নিয়ে বিতর্কের নামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বরযাত্রীর কয়েকজন সদস্যের ভূমিকা অস্বাভাবিক ও পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছে পুলিশ।

পুলিশ আধিকারিকদের বক্তব্য, দ্রুত মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি, পুরো ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, বিয়ের দিন কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কি না।

একটি বিয়ে যেখানে দুই পরিবারের নতুন সম্পর্কের সূচনা ঘটানোর কথা, সেখানে কীভাবে তা মৃত্যু ও হিংসার ঘটনায় পরিণত হল, তা নিয়ে শোকস্তব্ধ এলাকাবাসী। এখন সবাই চাইছে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক, যেন আর কোনো পরিবারকে এমন দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়।

গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ

Read more

Local News