পহেলগাঁও কাণ্ডে আমেরিকার হস্তক্ষেপ চাইলেন পাক প্রধানমন্ত্রী!
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এবার শান্তির বার্তা নিয়ে মধ্যস্থতায় নামল আমেরিকা। সংঘাত এড়াতে মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও নিজে ফোন করে কথা বললেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে।
গত ২২ এপ্রিল, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিদের হাতে ২৫ জন পর্যটক-সহ ২৬ জনের নির্মম মৃত্যু ঘটে। সেই ঘটনার পর থেকেই ভারত-পাক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর টানা সাতদিন ধরে চলছে গুলির লড়াই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই সেনাকে যে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্ণ ছাড় দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ উদ্বেগ প্রকাশ করে হস্তক্ষেপ চেয়ে বার্তা পাঠায় ওয়াশিংটনে। তারই প্রেক্ষিতে মার্কিন বিদেশসচিব রুবিও বুধবার রাতে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান।
মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানিয়েছেন, রুবিও ফোনে জয়শঙ্করের সঙ্গে কথোপকথনের সময় পহেলগাঁওয়ে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকা ভারতের পাশে রয়েছে।” একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে ভারতকে সংযম দেখানোর এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শাহবাজ রুবিওকে জানিয়েছেন যে, পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে পাক সরকারের কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ নেই। বরং তিনি ওই ঘটনার একটি নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি তুলেছেন, যাতে সত্য উদ্ঘাটিত হয়। ইসলামাবাদ তাতে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
পাশাপাশি, শাহবাজ অভিযোগ করেছেন যে, পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে ভারত কোনও প্রমাণ ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যেমন, ভারতের তরফে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়াতেই পাকিস্তান কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এই উত্তেজনার আবহে রুবিওর সক্রিয় ভূমিকা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ায় এক আশার আলো। মার্কিন বিদেশ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, “আমরা দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি এবং সংযম বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের আশা, ভারত ও পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে এবং এই অঞ্চলকে রক্ষা করবে নতুন সংঘাতের ছায়া থেকে।”
এখন দেখার, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই কূটনৈতিক চেষ্টা কতটা কার্যকর হয় এবং পহেলগাঁওয়ের রক্তাক্ত অধ্যায় ভবিষ্যতের শান্তি আলোচনায় কোন জায়গায় দাঁড়ায়।

