১০ বছর পর বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি হাতছাড়া করল ভারত। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল ১-৩ ব্যবধানে পরাজিত হলো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। প্রথম টেস্টে পার্থে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেলেও পরবর্তী ম্যাচগুলিতে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় ভারত। ব্রিসবেনে বৃষ্টির কারণে হার বাঁচালেও অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন এবং সিডনিতে ভারত স্পষ্ট ব্যবধানে হার মানে।
কিন্তু কেন এই হারের মুখোমুখি হলো ভারতীয় দল? এখানে পাঁচটি প্রধান কারণ বিশ্লেষণ করা হলো।
১. ব্যাটিং ব্যর্থতা: দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা
ভারতের হারের মূল কারণ ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। গোটা সিরিজে ভারতীয় ব্যাটাররা রান তুলতে পারেননি। প্রথম টেস্টে জয়ের পরও ভারতীয় দল প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে যায়। পুরো সিরিজে মাত্র একবার ৩০০ রানের গণ্ডি পেরিয়েছে ভারত। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া তিনবার ৩০০ রানের বেশি স্কোর করেছে।
যশস্বী জয়সওয়াল (৩৯১ রান) এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি (২৯৮ রান) ছাড়া অন্য কেউ বড় রান করতে পারেননি। সিনিয়র ক্রিকেটার বিরাট কোহলি (১৯০ রান) এবং রোহিত শর্মা (৩১ রান) ব্যর্থ হন। ঋষভ পন্থ দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হন। মেলবোর্ন টেস্টে পন্থ যদি আরও ধৈর্য ধরে খেলতেন, তাহলে হয়তো ভারত সেই ম্যাচ বাঁচাতে পারত।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার বিষয়ে বলেন, “টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে ভাল ব্যাটিং করতেই হবে। ১৭০-১৮০ রানে জেতা যায় না। টেস্টে অন্তত ৩৫০-৪০০ রান করতে হবে।”
২. রোহিত শর্মার দলে ফেরা এবং ভারসাম্যের অভাব
প্রথম টেস্টে রোহিত শর্মা অনুপস্থিত ছিলেন, এবং সেই ম্যাচ ভারতীয় দল ২৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে নেয়। তিনজন পেসার এবং দুই অলরাউন্ডার নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল মাঠে নামায়। কিন্তু রোহিত দ্বিতীয় টেস্টে দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
অ্যাডিলেড এবং ব্রিসবেনে রোহিত মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নামেন, তবে তিনি কোনো ম্যাচে বড় রান করতে পারেননি। মেলবোর্নে ওপেনিংয়ে ফিরে রাহুলকে তিন নম্বরে পাঠান, এবং শুভমন গিলকে বাদ দেওয়া হয়। এতে দলের মধ্যে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়।
৩. পেস বোলিং বিভাগের ক্লান্তি এবং ধারাবাহিকতার অভাব
ভারতীয় পেসাররা গোটা সিরিজে ধারাবাহিকভাবে ভাল বল করতে পারেননি। প্রথম টেস্টে দারুণ পারফর্ম করলেও পরবর্তী ম্যাচগুলিতে তাঁরা তেমন প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা ধৈর্য ধরে খেলেন এবং ভারতের পেস বোলিং আক্রমণকে প্রতিরোধ করেন।
মোহাম্মদ সিরাজ এবং মহম্মদ শামির মতো বোলাররা কিছু সময় ভালো বল করলেও তাদের পারফরম্যান্স পর্যাপ্ত ছিল না।
৪. অধিনায়কত্ব এবং সিদ্ধান্তের সমস্যা
রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত এবং খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় দলের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে রোহিতের নিজস্ব ব্যাটিং ফর্ম এবং তার দল গঠনের কৌশল আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত খেলোয়াড় এবং চোট সমস্যা
সিরিজ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের চোট সমস্যা ভারতীয় দলের জন্য বড় আঘাত হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম টেস্টের পর থেকেই চোটের কারণে বিভিন্ন খেলোয়াড় বাইরে চলে যান। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাব টের পাওয়া যায়।
হারের ফলাফল
ভারতীয় দল এই হারের ফলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলো। পরপর তিনবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করল তারা।
সামনের চ্যালেঞ্জ
ভারতীয় দলের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা। তবে এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী সিরিজগুলিতে উন্নত পারফরম্যান্স করার জন্য প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় বিভাগেই নতুন পরিকল্পনা এবং কৌশল নিয়ে মাঠে নামা জরুরি।
যুজবেন্দ্র চহালের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে জল্পনা: সমাজমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট