ভারত আরও রুশ তেল কিনুক!
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে সস্তায় খনিজ তেল কিনেছে ভারত। এতে যেমন কিছুটা সাশ্রয় করেছে নয়াদিল্লি, তেমনই তেল বিক্রি চালিয়ে অর্থনীতি সচল রেখেছে মস্কো। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন এই তেল কেনাকাটার জেরে ভারতকে দায়ী করছেন—আরোপ করছেন ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক। অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যুদ্ধের গোড়ার দিকেই ভারতকে রাশিয়া থেকে বেশি তেল কিনতে উৎসাহ দিয়েছিল আমেরিকাই।
প্রকাশ্যে এল মার্কিন দ্বিচারিতা
২০২৪ সালে দিল্লিতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের প্রতি এমন অনুরোধই জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। তাঁর কথায়, “ভারত যদি সুনির্দিষ্ট দামে রুশ তেল কেনে, তা বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।” শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, “এই তেল কেনা কোনও নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন নয়। বরং এতে আমেরিকার নীতিগত লাভ হচ্ছে।”
রাশিয়ার তেল আমদানিতে ভারতের ভূমিকা
রয়টার্স এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের তেল আমদানি রাশিয়া থেকে এখন ৩৫-৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই ভারত দিনে গড়ে প্রায় ১৭.৫ লাখ ব্যারেল রুশ তেল কিনেছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে, ফলে আমেরিকা এবং ইউরোপের ভোক্তারাও লাভবান হয়েছেন।
তেলের রাজনীতিতে ইউটার্ন ট্রাম্পের
কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর ট্রাম্প এই নীতিতে বড়সড় পালাবদল এনেছেন। তিনি মনে করছেন, ভারত রাশিয়ার অর্থনীতি সচল রেখেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার রসদ জোগাচ্ছে। তাই নয়াদিল্লির উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করেছেন শুল্কের হুমকি দিয়ে। ভারতীয় পণ্যে আমদানি শুল্ক ইতিমধ্যেই বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ।
কিন্তু আমেরিকার আসল লক্ষ্য কী?
বিশ্লেষকদের মতে, এই হঠাৎ শুল্ক-নীতি বদলের পেছনে একাধিক কৌশলগত হিসাব রয়েছে। ট্রাম্প চায় ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করতে, যার জন্য রাশিয়ার আগ্রাসন থামানো দরকার। ভারত তেল কেনা বন্ধ করলে মস্কোর কোষাগারে টান পড়বে, আর পুতিন যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হবেন—এটাই ট্রাম্পের যুক্তি।
ভারতের জবাবও স্পষ্ট
শুল্ক চাপানোর হুমকি দিলেও নয়াদিল্লি এখনও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘‘পশ্চিম ইউরোপও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালাচ্ছে, এমনকি আমেরিকাও এখনও রুশ ইউরেনিয়াম আমদানি করছে।’’ ফলে শুধু ভারতের উপর শুল্ক চাপানো কতটা ন্যায্য, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
‘বন্ধু’ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাপালা?
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন দূত নিকি হ্যালি ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, “চিন রাশিয়া-ইরান থেকে তেল কিনে চলেছে, অথচ তারা ৯০ দিনের শুল্ক ছাড় পাচ্ছে। ভারত, যে কিনা আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাদের উপর এই রকম চাপ দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।”
শেষ কথা
আন্তর্জাতিক কূটনীতির এই নাটকে ভারত একদিকে যেমন কৌশলগত চাপের মুখে, অন্যদিকে আবার নিজের জাতীয় স্বার্থে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করতে নারাজ। আসন্ন মোদী-জিনপিং বৈঠক এবং ডোভালের মস্কো সফরের দিকে এখন তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল। কারণ, এই তেল যুদ্ধ শুধু জ্বালানি নয়, আসলে ভূ-রাজনীতির কুশলী দাবা খেলা।
মায়ের কঠোর আদেশ থেকে শুরু করে ছোট ছোট টাস্ক, কন্যা পলককে বড় করতে যা করেছেন শ্বেতা তিওয়ারি

