Monday, December 1, 2025

ভারতের বায়ুসেনার জন্য পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান: আমেরিকার ‘এফ-৩৫’ না রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭’?

Share

এফ-৩৫

ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের অভাব মেটাতে বিদেশ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু বিমান কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। আলোচনায় রয়েছে দুটি বিমান: আমেরিকার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ এবং রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’। এই দুটি যুদ্ধবিমানের মধ্যে কোনটি হবে ভারতীয় বায়ুসেনার পরবর্তী অস্ত্র, তা নিয়ে চলছে তীব্র জল্পনা। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি।

কেন প্রয়োজন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান?

বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনা পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমানের অভাবে ভুগছে। আকাশপথে আধিপত্য বজায় রাখতে এবং শত্রুদের মোকাবিলা করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই লড়াকু বিমানের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫’ এবং ‘এসইউ-৫৭’ বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭’: সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

রাশিয়ার তৈরি ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’ ইতিমধ্যেই পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান হিসাবে পরিচিত। এটি স্টেলথ প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় রাডারের আওতায় ধরা পড়া বেশ কঠিন। মাঝ আকাশে শত্রু বিমানের সঙ্গে লড়াই (ডগফাইট) কিংবা আকাশপথ থেকে স্থলভাগে আক্রমণের জন্য উপযুক্ত।

ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য একটি বড় সুবিধা হল, ‘এসইউ-৫৭’ রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মস এবং ডিআরডিও-র তৈরি ‘অস্ত্র’ মিসাইল ব্যবহার করতে সক্ষম। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব ‘এসইউ-৫৭’কে এগিয়ে রাখছে।

তবে সমস্যা হল রাশিয়ার চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতীতে ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ কেনার সময়ও সরবরাহে বিলম্ব হয়েছিল, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য চিন্তার বিষয়।

আমেরিকার ‘এফ-৩৫’: আধুনিক প্রযুক্তি ও সীমাবদ্ধতা

আমেরিকার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। এটি স্টেলথ প্রযুক্তি, উল্লম্বভাবে অবতরণের ক্ষমতা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মতো একাধিক সুবিধা প্রদান করে। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে এই যুদ্ধবিমানের কার্যক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে।

তবে ‘এফ-৩৫’-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল প্রযুক্তি হস্তান্তর। আমেরিকা এখনও এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়নি। এছাড়া এই যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক বেশি।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

দু’টি বিমানের ক্ষেত্রেই দাম নিয়ে কোনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি। তবে রাশিয়া এবং আমেরিকা উভয়েই তাদের বিমান বিক্রির জন্য বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছে। সূত্রের খবর, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন সফরের সময় ‘এসইউ-৫৭’ কেনার চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে। অন্যদিকে, আমেরিকার পক্ষ থেকেও ‘এফ-৩৫’ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭’ প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুবিধার জন্য বেশি পছন্দের হতে পারে। তবে আমেরিকার ‘এফ-৩৫’ তার আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: দেশীয় প্রযুক্তি ও ‘তেজস’

বিদেশ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘তেজস মার্ক টু’ এবং ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট’ (অ্যামকার) তৈরির কাজ চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য রয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

শেষ কথা

‘এফ-৩৫’ এবং ‘এসইউ-৫৭’-এর মধ্যে কোনটিকে ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে নেবে, তা নিয়ে পুরো দেশ অপেক্ষায়। সেনার আধুনিকীকরণে সরকারের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভর ভারতের উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসা হবে।

এই সিদ্ধান্ত শুধু বায়ুসেনার শক্তি বৃদ্ধি করবে না, বরং ভবিষ্যতে ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলকেও প্রভাবিত করবে।

Read more

Local News