Thursday, January 30, 2025

ভারতীয় সেনাবাহিনীর নতুন মারণাস্ত্র: আত্মঘাতী ড্রোন ‘খড়্গ’

Share

আত্মঘাতী ড্রোন ‘খড়্গ’

ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি উন্নত করার পথে আরও এক ধাপ এগোল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এবার সেনার হাতে এসেছে নতুন প্রজন্মের আত্মঘাতী ড্রোন ‘খড়্গ’। এই ড্রোন মাত্র ৩০ হাজার টাকায় তৈরি করা হয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর উপর আঘাত হানতে বিশেষ কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে।

আত্মঘাতী ড্রোন ‘খড়্গ’ কী?

‘খড়্গ’ হল ভারতীয় সেনার তৈরি একটি আত্মঘাতী ড্রোন। এটি বিস্ফোরকবাহী এবং নজরদারি চালানোর ক্ষমতা রাখে। সেনার দাবি, এই ড্রোন ব্যবহার করে শত্রুপক্ষকে নিশানা করা আরও সহজ হবে। সেকেন্ডে ৪০ মিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম এই ড্রোনটি দেড় কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত করতে পারে। এর ওজন অত্যন্ত হালকা এবং এটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থেকে শত্রুর উপর হামলা চালায়, যা উন্নত রাডারের জন্যও চিহ্নিত করা কঠিন।

ড্রোনের নামের ইতিহাস

‘কামিকাজ়ে’ শব্দটির উৎপত্তি জাপানি ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘ঐশ্বরিক বাতাস’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের পাইলটরা আত্মঘাতী মিশনে অংশ নিতেন, সেই ঐতিহাসিক ঘটনা থেকেই এই নামকরণ। আজকের দিনে যেসব ড্রোন আত্মঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম, সেগুলিকে ‘কামিকাজ়ে ড্রোন’ বলা হয়।

খড়্গের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

‘খড়্গ’ ড্রোনটি জিপিএস নেভিগেশন সিস্টেম এবং অত্যাধুনিক ক্যামেরা দ্বারা সজ্জিত। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে বসেও সেনা শত্রুর অবস্থান চিহ্নিত করে আঘাত হানতে পারবে। এর শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং নকশা এটিকে সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তুলেছে।

সাম্প্রতিক মহড়ায় খড়্গের সফল পরীক্ষা

সম্প্রতি রাজস্থানের মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ‘খড়্গ শক্তি’ নামক মহড়ায় এই ড্রোনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। মহড়ায় খড়্গ ছাড়াও সোয়ার্ম ড্রোন, কোয়াডকপ্টার এবং লজিস্টিক ড্রোনের প্রদর্শন হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল পুষ্কর এই মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন এবং সেনার নতুন ‘খড়্গ কর্পস্’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সেনার অস্ত্রাগারে আত্মঘাতী ড্রোনের ভূমিকা

‘খড়্গ’ সেনার প্রথম আত্মঘাতী ড্রোন নয়। এর আগে ‘নাগাস্ত্র-১’ নামে আরেকটি ড্রোন সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগারে যুক্ত হয়েছে। নাগাস্ত্র-১ ড্রোন ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং শত্রুর অবস্থান পরিবর্তিত হলে বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে সেটিকে ফিরিয়ে আনা যায়।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ২০২০ সালে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘর্ষে আত্মঘাতী ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ড্রোনগুলির সাহায্যে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি এবং শত্রুর ঘাঁটিতে নির্ভুল আঘাত হানা হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনীও সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ড্রোন শক্তি বাড়াতে মনোনিবেশ করেছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন রয়েছে, যেগুলি নজরদারি এবং আক্রমণ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে টাটার তৈরি ‘এএলএস-৫০’, ইজরায়েলের ‘স্পাইক ফায়ারফ্লাই’, এবং পোল্যান্ডের ‘ওয়ারমেট স্কাইস্ট্রাইকার’। এছাড়াও আমেরিকা থেকে অত্যাধুনিক ‘এম কিউ-৯ রিপার’ ড্রোন কেনা হচ্ছে, যা আত্মঘাতী না হলেও ‘হেলফায়ার’ মিসাইল ছুড়ে শত্রুকে আঘাত হানতে পারে।

প্রতিরক্ষা শক্তিতে নতুন মাত্রা

মাত্র ৩০ হাজার টাকায় তৈরি এই ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম। ‘খড়্গ’ আত্মঘাতী ড্রোনের অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় সেনার ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন এবং পাকিস্তানের মতো দেশের বিরুদ্ধে রণনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

‘খড়্গ’-এর মতো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোনগুলি শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করছে না, বরং সাশ্রয়ী খরচে সেনার জন্য কার্যকর মারণাস্ত্রও প্রমাণিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের উন্নত অস্ত্রগুলি ভারতের সামরিক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা আরও বাড়াবে।

Read more

Local News