ভারতীয় শেয়ার বাজার
২০২৪ সালের অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে ভারতীয় শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীরা বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নেওয়া শুরু করেছেন, যা বাজারের পতনে অন্যতম মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেন্টিমেন্টের পতন এবং শেয়ার সূচকের ক্রমাগত নিম্নমুখী প্রবণতা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই দুই মাসে মোট ১,৩৬,২৭৮ কোটি টাকা বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে, যার বেশিরভাগই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের থেকে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই প্রবণতার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ কাজ করছে। প্রথমত, ভারতের শেয়ার বাজারের মূল্যায়ন অত্যন্ত উচ্চ হয়ে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় নয়। বিদেশি লগ্নিকারীরা মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেশি ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, এবং তাই তারা লাভ তুলছেন। দ্বিতীয়ত, আয় হ্রাসের উদ্বেগ বেড়েছে। অর্থনীতি যেখানে সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং কোম্পানিগুলির লাভ কমে যাচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের তহবিল সরিয়ে নিচ্ছেন। তৃতীয়ত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি ও কর ব্যবস্থায় পরিবর্তনগুলি আন্তর্জাতিক বাজারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা আমেরিকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে এবং ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ কমিয়েছে।
এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা আরও জানান যে, ভারতের শেয়ার বাজারের প্রাথমিক বাজারে যেমন ‘সুইগি’ এবং ‘হুন্ডাই’-এর আইপিওগুলির মাধ্যমে কিছু বিদেশি লগ্নিকারীরা আকৃষ্ট হলেও, সেকেন্ডারি বাজারে তাদের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এই সময়ে বড় বড় আইপিওর মাধ্যমে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা নিজেদের কিছু শেয়ার বিক্রি করেছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিকে সহায়ক হয়েছে। তবে বছরের শেষের দিকে বিদেশি লগ্নিকারীরা কম বিনিয়োগ করতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, বিদেশি লগ্নিকারীদের চলে যাওয়ার কারণে ভারতের শেয়ার বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা প্রভাব ফেলছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপরও। শেয়ার বাজারে এই ধরণের অস্থিরতা যদি আরও বাড়ে, তবে এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।
এর পাশাপাশি, ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার যদি আগামী দিনগুলোতে প্রত্যাশা অনুযায়ী না বাড়ে, তবে বিদেশি লগ্নিকারীদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের এই পরিস্থিতি কিছুটা সময়ে স্থিতিশীল হতে পারে, তবে ভারতের শেয়ার বাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আরও কিছু সংস্কারের প্রয়োজন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতীয় অর্থনীতির শক্তিশালী পুনরুদ্ধার এবং বাজারের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।