ভাতা নয়, ন্যায়বিচারই চায় চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় মাসিক ভাতা মিলবে ঠিকই, কিন্তু ন্যায়ের লড়াই থেকে এক ইঞ্চিও সরতে নারাজ চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা— ভাতা নেবেন, তবে আন্দোলন চলবে একইভাবে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভিতরে আট জন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে চার জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা জানিয়েছেন, তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। তবে এবার থেকে নির্জলা অনশন নয়, জল খেয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন আন্দোলনকারীরা।
কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হল?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার (আসলে ২৫ হাজার ৫৩৭ জন) শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন। তারপর থেকেই রাজপথে নেমে নিজেদের ন্যায্য দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। অনেকের প্রশ্ন— রাজ্য সরকার কেন ‘যোগ্য’ আর ‘অযোগ্য’-দের আলাদা করে তালিকা প্রকাশ করল না? কেন ‘যোগ্য’ হয়েও চাকরি হারাতে হবে?
শুধু শিক্ষক নন, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরাও এই প্রতিবাদে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার বারবার শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করছে, কিন্তু শিক্ষাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও তাঁদের হয়ে সওয়াল করা হয়নি। আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে শিক্ষকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এলেও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। এ নিয়েই নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।
এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী শনিবার নবান্ন থেকে মুখ্যসচিবের মাধ্যমে ঘোষণা করেন— মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রুপ সি কর্মীরা পাবেন ২৫ হাজার টাকা করে, আর গ্রুপ ডি কর্মীরা পাবেন ২০ হাজার টাকা। একইসঙ্গে রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশনও দায়ের করবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তবে এসব সান্ত্বনায় আন্দোলনকারীরা দমে যাননি।
তাঁরা বলছেন, ভাতা কিছুটা আর্থিক সুরাহা দিলেও তাঁদের মূল লড়াই ভাতার জন্য নয়। তাঁদের দাবি, ন্যায়বিচার। উপযুক্তদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে, এবং উপযুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের দ্রুত পুনর্নিয়োগ করতে হবে।
চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী সত্যজিৎ ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘‘আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। আমরা ভাতা পাওয়ার জন্য এই লড়াই করছি না। এই ভাতায় সংসার চালানোর কিছুটা সাহায্য মিলবে ঠিকই, তবে ন্যায্য চাকরির দাবিতে আমরা রাস্তায় রইব।’’
এদিকে, আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যেই ‘অযোগ্য’ শিক্ষাকর্মীদের নাম ‘স্যালারি পোর্টাল’ থেকে বাদ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জেলার স্কুল পরিদর্শকরা স্কুলগুলিকে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাতা-ঘোষণার পরও আন্দোলনের আগুন নেভেনি। বরং নতুন উদ্যমে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা।
পহেলগাঁও হামলা: বলিউডের তারকাদের ক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র বার্তা