ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতা!
ভালোবাসার ছলনায় যে এত নির্মমতা লুকিয়ে থাকতে পারে, তা যেন কল্পনাতেও আসে না! উত্তরপ্রদেশের এক শান্ত পরিবারের আবরণ ভেদ করে উঠে এল এক ভয়ংকর সত্য। মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতের (৩২) মৃত্যু ছিল পরিকল্পিত, নিষ্ঠুর এবং চরম বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিচ্ছবি। স্ত্রী মুস্কান রস্তোগী তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্লর সঙ্গে মিলে সৌরভকে হত্যা করেন, দেহ টুকরো করেন ১৫টি খণ্ডে, আর তারপর সব ‘শেষ করে’ প্রেমিকের হাত ধরে উধাও হয়ে যান শিমলায়!
স্বামীকে হত্যা, দেহ টুকরো— পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছিল ছয় বছরের মেয়ে!
২০১৬ সালে ভালোবাসার পরিণতি হয়েছিল বিবাহবন্ধনে। সৌরভ মুস্কানকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, তাঁর জন্য চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলেন, কাটিয়েছেন সংসারের সুখ-দুঃখের মুহূর্ত। কিন্তু সেই ভালোবাসার প্রতিদান কী পেলেন তিনি? স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিকের হাতে নির্মম মৃত্যু!
পুলিশি জেরায় মুস্কান জানান, ৪ মার্চ রাতে স্বামীর খাবারে মাদক মিশিয়ে দেন তিনি। সৌরভ তখনও বুঝতে পারেননি, যে রাতটি হতে চলেছে তাঁর জীবনের শেষ রাত! নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে মুস্কান প্রেমিক সাহিলকে ডেকে আনেন। তারপর দু’জনে মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সৌরভের বুকে একাধিকবার আঘাত করেন, মৃত্যু নিশ্চিত হলে দেহটিকে বাথরুমে নিয়ে যান। পাশের ঘরে তখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিল তাঁদের ছয় বছরের কন্যা পিহু!
দেহের ১৫ টুকরো, সিমেন্টে ঢাকা লাশ
রক্তাক্ত বাথরুমে দাঁড়িয়ে মুস্কান ও সাহিল শুরু করেন পরবর্তী পরিকল্পনা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে সৌরভের দেহ ১৫ টুকরোয় বিভক্ত করা হয়। এরপর প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর সেই দেহাংশগুলো ঢুকিয়ে সিমেন্ট দিয়ে সেটি ঢেকে দেওয়া হয়। যেন কোনওভাবেই দেহ উদ্ধার করা না যায়!
পরের দিন নিজের মেয়েকে বাপের বাড়িতে রেখে, সব ‘শেষ করে’ প্রেমিকের হাত ধরে শিমলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুস্কান। নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর এই নারী তখনও ভাবেননি, যে সত্য কখনও না কখনও বেরিয়ে আসবেই!
মায়ের সন্দেহে ফাঁস মুস্কানের কীর্তি
শিমলা থেকে ফিরে নিজের বাপের বাড়িতে যান মুস্কান। কিন্তু জামাই সৌরভ কোথায়? বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর কোনও খোঁজ নেই— এমন প্রশ্ন করতে শুরু করেন মুস্কানের মা। প্রথমে নানা অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করেন মুস্কান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে স্বীকার করে নেন— তিনি ও সাহিল মিলে সৌরভকে হত্যা করেছেন!
মেয়ের মুখ থেকে এমন নৃশংস সত্য জানতে পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে যান মুস্কানের বাবা-মা। কোনও রাখঢাক না করেই মেয়েকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা এবং স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আমাদের মেয়ের জন্য কোনও করুণা নেই, আমরা চাই তার সর্বোচ্চ শাস্তি— মৃত্যুদণ্ড!”
ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং নির্মম হত্যার গল্প
২০১৬ সালে বিয়ের পর সুখের জীবন কাটাচ্ছিলেন সৌরভ ও মুস্কান। কন্যাসন্তান হওয়ার পর, সংসারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে সৌরভ বিদেশে চাকরি নিয়ে যান। কিছুদিন আগে তিনি ফিরে এসেছিলেন স্ত্রী ও মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করতে— আর সেটাই হয়ে দাঁড়াল তাঁর জীবনের শেষ সফর!
পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে, সৌরভ বিদেশে চলে যাওয়ার পর প্রতিবেশী যুবক সাহিলের প্রতি আকৃষ্ট হন মুস্কান। তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবগত ছিলেন তাঁর বাবা-মাও। কিন্তু সেই উচ্ছৃঙ্খলতা যে একদিন খুনের নেশায় রূপ নেবে, তা হয়তো ভাবতেও পারেননি কেউ!
ন্যায়ের অপেক্ষায় এক নিরীহ প্রাণ
সৌরভের পরিবার আজও স্তম্ভিত— যে স্ত্রীকে তিনি ভালোবেসে সমস্ত কিছু দিয়েছিলেন, সেই স্ত্রী-ই কি না তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল! পুলিশ ইতিমধ্যেই মুস্কান ও সাহিলকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু শুধুই কি শাস্তি যথেষ্ট? একজন নিষ্পাপ শিশুর জীবন থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তার বাবাকে।
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি ভালোবাসার মোড়কে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতার এক ভয়াবহ চিত্র!
পরিচালকের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ! নুসরতের সই জাল, কী বলছেন প্রযোজকরা?