ভক্তদের দানের টাকায় চোখ!
ভক্তের বিশ্বাসের জায়গা মন্দির। আর সেই বিশ্বাসের প্রতীক প্রণামী বাক্সে থাকা টাকাই গেল চুরির শিকার! চুরির দায়ে ধরা পড়েছেন এক ব্যাঙ্ককর্মী, যাঁর দায়িত্ব ছিল মন্দিরের সেই দানের টাকা গুনে যথাযথ অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার।
ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের ঠাকুর বাঁকে বিহারি মহারাজ মন্দিরের। ওই মন্দিরে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা জমা হয় ভক্তদের দানপত্রে। নিয়ম অনুযায়ী, মাসে এক বা দু’বার এসব টাকা গোনার কাজ দেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে। সেই মতোই কিছু দিন আগে কানাড়া ব্যাঙ্ক থেকে দু’জন কর্মী আসেন টাকা গোনার কাজে। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন অভিনব সাক্সেনা, যিনি ২০২০ সাল থেকে বৃন্দাবন শাখায় কর্মরত।
সাধারণ রুটিনের মতোই শুরু হয়েছিল টাকা গোনার কাজ। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে মন্দির ট্রাস্টের এক কর্মী সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার সময় দেখতে পান, অভিনব কিছু নোট আলাদা করে রাখছেন। সন্দেহ হওয়ায় তৎক্ষণাৎ তাঁকে থামানো হয় এবং তার ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। তখনই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এক লক্ষ টাকারও বেশি নগদ লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি নিজের ব্যাগে!
এর পরেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশের তল্লাশিতে তাঁর কাছ থেকে আরও ন’লক্ষ টাকার বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। অর্থাৎ, মোট প্রায় দশ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়ে। অভিনব পুলিশি জেরায় নিজের দোষ স্বীকারও করে নেন। পুলিশের দাবি, তিন দিন ধরেই ধাপে ধাপে টাকা সরাচ্ছিলেন তিনি।
ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নেয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তকারীরা এটাও খতিয়ে দেখছেন, অভিনব একাই এই চুরির পেছনে ছিলেন নাকি আরও কেউ জড়িত রয়েছে তাঁর সঙ্গে।
মন্দির কর্তৃপক্ষের এক সদস্য জগন্মোহন জানিয়েছেন, “আমরা নিয়ম মেনে টাকা গোনার জন্য চিঠি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্মীদের ডাকি। এই বারও তাই করা হয়েছিল। কিন্তু এত বড় বিশ্বাসভঙ্গের কথা ভাবিনি। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, ব্যাঙ্ক কর্মীরা অন্তত মন্দিরের টাকায় হাত দেবেন না!”
এফআইআরে উল্লেখ রয়েছে, মন্দির চত্বরে ১৬টি দানপাত্র রয়েছে। সেখানেই নিয়মিত দান দেন হাজার হাজার ভক্ত। সেগুলো থেকে টাকা গুনে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে জমা করাই নিয়ম। সেই গুরুদায়িত্বের সুযোগ নিয়েই লোভ সামলাতে পারেননি অভিনব।
রামপুরের বাসিন্দা অভিনবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি তদন্ত চলছে তাঁর সঙ্গে অন্য কেউ যুক্ত আছে কি না, সে দিকেও। বিশ্বাসের জায়গায় এভাবে চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষজনও।
একটি মন্দির শুধু দেবতার আশ্রয় নয়, ভক্তদের ভরসারও জায়গা। সেই ভরসায় হাত দেওয়া যে কত বড় অপরাধ—তা হয়তো আইন বলে দেবে, কিন্তু মন থেকে মাফ করা কঠিন!
স্ট্রেস কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে মাসাজ, তবে সাবধানে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত