ব্যান্ডেল চিজ়!
যদি রসগোল্লা বাঙালির মিষ্টির রাজার মুকুট পরিধান করে থাকে, তবে ব্যান্ডেল চিজ় নিঃসন্দেহে বাংলার গোপন রত্ন। যদিও এই চিজ়ের জনপ্রিয়তা রসগোল্লার মতো আকাশছোঁয়া নয়, তবে এর ইতিহাস, স্বাদ ও নির্মাণশৈলী একেবারেই অনন্য। এই চিজ় আজ শুধুমাত্র বাংলাতেই তৈরি হয়, এবং এটি এক অনন্য খাদ্যসামগ্রী, যা ইতিহাস ও স্বাদের মেলবন্ধন ঘটায়।
ইউরোপ থেকে বাংলার বুকে
ব্যান্ডেল চিজ়ের নাম শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ইতিহাসের এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়। হুগলি নদীর তীরে পর্তুগিজ উপনিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই চিজ়ের উৎপত্তি। মধ্যযুগের ইউরোপীয় গ্রামাঞ্চলের রান্নাঘরে যেমন ধোঁয়া ও লবণের সংমিশ্রণে সংরক্ষণ করা হত খাদ্য, ব্যান্ডেল চিজ়েও রয়েছে সেই স্বাদ ও গন্ধের প্রতিচ্ছবি।
নোনতা স্বাদের এই চিজ়ের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল এর ধোঁয়াটে গন্ধ। একরাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে নোনতার তীব্রতা কিছুটা কমে যায়, তবে স্বাদে আসে এক অনন্যতা। কলকাতার নিউ মার্কেটের বিশেষ কিছু দোকানে পাওয়া যায় এই দুষ্প্রাপ্য চিজ়, যা এখন শুধুমাত্র বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ঘোষ পরিবারের হাতেই তৈরি হয়।
একটি পরিবারের অমূল্য ঐতিহ্য
ব্যান্ডেল চিজ় তৈরির রহস্য আজও শুধুমাত্র ঘোষ পরিবারেই সংরক্ষিত। পলাশ ঘোষ, যিনি এখন এই চিজ় তৈরির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, জানালেন যে তাঁর ঠাকুরদা ও বাবা বহু বছর ধরে এই চিজ় তৈরি করে আসছেন। এই ঐতিহ্য আজও তাঁদের হাতে রয়ে গেছে, তবে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন এখনো খুবই সীমিত। প্রতিদিন মাত্র ৪০০-৫০০ পিস তৈরি করা হয়, যা কলকাতার নিউ মার্কেটের নির্দিষ্ট কিছু দোকানে বিক্রি হয়।
বিশ্ব দরবারে বাংলার চিজ়
সম্প্রতি ব্যান্ডেল চিজ়ের জনপ্রিয়তা আবারও আলোচনায় এসেছে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে দাবি করছেন, এটি বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায় না, শুধুমাত্র বাংলাতেই সংরক্ষিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই চিজ় নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল, তবে এখনো পর্যন্ত এটি ভৌগোলিক স্বীকৃতি (GI) পায়নি। সৌরভ গুপ্ত নামের এক আইনজীবী এই চিজ়ের GI তকমা পাওয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
কোথায় ব্যবহৃত হয় ব্যান্ডেল চিজ়?
ব্যান্ডেল চিজ় শুধু রান্নার উপকরণ নয়, এটি এক অনন্য স্বাদের বাহক। কন্টিনেন্টাল খাবারের রাঁধুনিদের কাছে এটি খুবই মূল্যবান। স্যালাড, পাস্তা, রিসোতো বা স্যান্ডউইচে এর ব্যবহার এক নতুন মাত্রা যোগ করে। অনেকেই এটি পানীয়ের সঙ্গে সোজাসুজি খেতেও পছন্দ করেন। ফুড ব্লগারদের মতে, ব্যান্ডেল চিজ় দিয়ে বানানো ছানার পাতুরি বা স্যান্ডউইচ একেবারে নতুন ধরনের স্বাদ এনে দেয়।
ভবিষ্যৎ কি বলছে?
ব্যান্ডেল চিজ়ের বাণিজ্যিকীকরণ এখনো তেমনভাবে হয়নি। রাজ্য সরকারের প্রত্যাশিত সাহায্য না পাওয়ায় এই ঐতিহ্য সংরক্ষণে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন পলাশ ঘোষ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর কদর বাড়ছে, বিশেষ করে আমেরিকার নামী শেফরা ইতিমধ্যেই এটি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বাংলার রসগোল্লার GI স্বীকৃতির জন্য যে লড়াই হয়েছিল, তা আজও অনেকের মনে আছে। ব্যান্ডেল চিজ়ও কি তেমনই এক লড়াইয়ে এগিয়ে চলেছে? সময়ই দেবে তার উত্তর। তবে বাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
শান্তির ডাকের মাঝেই যুদ্ধের ছায়া: ইউক্রেন সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ পুতিনের, ক্ষুব্ধ ইউরোপ