Friday, February 7, 2025

‘ব্যাট চললে জনসংযোগ লাগে না’, ২০ বছর কেন সমাজমাধ্যম তাঁর কাছে ব্রাত্য, ব্যাখ্যা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির

Share

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি—একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার, যিনি আইসিসির সমস্ত প্রধান ট্রফি জয়ের গৌরব অর্জন করেছেন এবং আইপিএল-এ পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তবে ক্রিকেট মাঠে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিলেও সমাজমাধ্যমে তিনি প্রায় নিষ্ক্রিয়। তাঁর জনসংযোগ আধিকারিকেরা বহু বার তাগিদ দেওয়ার পরেও ধোনি এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে খুব একটা সময় দেন না। কিন্তু কেন তিনি সমাজমাধ্যমে সক্রিয় হতে আগ্রহী নন?

২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা ধোনির ২০ বছরের ক্যারিয়ার নানা রঙে রাঙানো। তবে এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি কখনও সমাজমাধ্যমের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। সম্প্রতি, ধোনি নিজেই তাঁর এই মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, “সমাজমাধ্যমের খুব একটা ভক্ত নই আমি। আমার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মিডিয়া ম্যানেজার ছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে খেলছি। সেই সময় টুইটার (এখন এক্স) জনপ্রিয় হয়নি। পরে ইনস্টাগ্রাম আসে। আমাকে সব ম্যানেজার বলেছিলেন পিআর (জনসংযোগ) করার জন্য। আমি বার বার একই উত্তর দিয়েছি, ভাল খেললে পিআর লাগে না।”

ক্রিকেটীয় যাত্রার শুরু এবং সাফল্য

ধোনির অভিষেক ২০০৪ সালে ভারতীয় দলের হয়ে। যদিও প্রথম ম্যাচে তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন, তার পরও তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার অসাধারণ হয়ে উঠেছিল। ২০০৭ সালে ধোনির নেতৃত্বে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। এরপর ২০১১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই ভারত দীর্ঘ ২৮ বছর পর এক দিনের বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছিল ধোনির ভারত।

টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৪ সালে বিদায় নিলেও ধোনি ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টিতে খেলতে থাকেন। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২০২০ সালের ১৫ অগস্ট, ধোনি একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করেন।

সমাজমাধ্যম নিয়ে ধোনির দৃষ্টিভঙ্গি

ধোনি বিশ্বাস করেন, একজন ক্রীড়াবিদের মূল কাজ হলো মাঠে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করা। তিনি মনে করেন, মাঠে যদি পারফরম্যান্স ভালো হয়, তবে আলাদা করে জনসংযোগের প্রয়োজন পড়ে না। ধোনির ভাষায়, “ভাল খেললে পিআর লাগে না।” এই সহজ অথচ গভীর বার্তায় তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি কেন সমাজমাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

এটা ঠিক যে, বর্তমান যুগে সমাজমাধ্যম ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ভক্তদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, নিজের ভাবনাচিন্তা প্রকাশ করা এবং ব্র্যান্ড প্রচার করার জন্য অনেকেই এটি ব্যবহার করেন। তবে ধোনি এই সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকেন। তাঁর মতে, একজন ক্রীড়াবিদের মূল বিচার হয় মাঠে তাঁর দক্ষতার ভিত্তিতে, না যে তিনি অনলাইনে কতটা সক্রিয়।

ধোনির সমাজমাধ্যম ব্যবহার

যদিও ধোনি সমাজমাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় নন, তবে বিশেষ কিছু সময় তিনি এই মাধ্যম ব্যবহার করেছেন। ২০২০ সালে তাঁর অবসর ঘোষণার পোস্ট তারই একটি উদাহরণ। এছাড়া তিনি মাঝেমধ্যে নিজের ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনের মুহূর্ত শেয়ার করেন। তবে সেগুলি সংখ্যায় অতি সামান্য।

ধোনির এই আচরণ তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বরাবরই সংযত, বিনয়ী এবং নিজের কাজে মনোযোগী। মাঠে তাঁর উপস্থিতি এবং নেতৃত্বের দক্ষতাই তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

ধোনি: মাঠের বাইরের কিংবদন্তি

সমাজমাধ্যমে সক্রিয় না হয়েও ধোনি যে ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন, তা তাঁর ক্রিকেট দক্ষতা এবং নেতৃত্বের জন্য। আইপিএল-এ এখনও ধোনি তাঁর অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে চলেছেন। মাঠের বাইরে থাকলেও তাঁর অনুগামীরা তাঁর প্রতি একই রকম ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকেন।

সমাজমাধ্যমের যুগেও ধোনি প্রমাণ করেছেন, জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য মাঠের পারফরম্যান্সই যথেষ্ট। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে আরও বিশেষ করে তুলেছে এবং তাঁর ভক্তদের জন্য তিনি সব সময়ই একজন অনুপ্রেরণার উৎস।

Read more

Local News