বেতন পোর্টালে নাম থাকলেও স্বস্তি নয়
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় এক তীব্র অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন এই পেশাজীবীরা। সেই রায়ের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলগুলির বেতন আপলোডের পোর্টাল। তাই নতুন করে উদ্বেগ শুরু হয়েছিল, পোর্টাল খুললে তাঁদের নাম আদৌ থাকবে কি না। অবশেষে বুধবার বেতন পোর্টাল খুলতেই দেখা গেল — ‘বাতিল হওয়া’ শিক্ষকদের নাম এখনও তালিকায় রয়েছে।
প্রথম ঝটকায় এটা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিল অনেককে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে আরও বড় প্রশ্ন — নাম থাকলেই কি মিলবে বেতন?
প্রধান শিক্ষকেরাও জানাচ্ছেন অসহায়তার কথা
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেতন পোর্টালের তালিকায় আগের মাসের নাম 그대로 রয়েছে। সেখানে কোনও সংযোজন বা বিয়োজন হয়নি। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, তাঁদের পক্ষে এই তালিকায় নাম ঢোকানো বা বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা কেবল আয়কর বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে ছোটখাটো পরিবর্তন করতে পারেন। ফলে, কার নাম থাকছে বা বাদ যাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে উচ্চতর স্তরের নির্দেশিকার উপর।
আইনি দিকেও চলছে তোড়জোড়
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে, যাতে এই ২৬ হাজার জনের বেতন বন্ধ না হয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ চলছে এবং চাকরি হারানো ‘যোগ্য’দের সঙ্গেও দ্রুত বৈঠক করা হবে। তবে এসব আশ্বাসেও পুরোপুরি ভরসা পাচ্ছেন না চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
আন্দোলন জারি, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
চাকরিচ্যুতদের একাংশ ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ডিআই অফিস অভিযান শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধাক্কাধাক্কি এমনকি লাঠিচার্জের অভিযোগও উঠেছে। কলকাতার কসবার ডিআই অফিসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই কয়েকজন আহত হন। পুলিশের বিরুদ্ধে লাথি মারার অভিযোগ ওঠে, যা স্বীকার করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এই ধরনের আচরণ কাম্য নয়। তবে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরই হালকা বলপ্রয়োগ করেছে।’’
এদিকে রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনও নাগরিকের অধিকার নয়। পুলিশ তা হলে নিশ্চুপ থাকতে পারে না। তবে আন্দোলনকারীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, “বিনা প্ররোচনাতেই পুলিশ আমাদের উপর চড়াও হয়েছে।”
চলবে বিক্ষোভ, বৃহস্পতিবার ফের রাজপথে মিছিল
চাকরিচ্যুতদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ থেকে রানি রাসমণি পর্যন্ত মিছিলের পরিকল্পনা রয়েছে। শুক্রবার রয়েছে স্কুল পরিদর্শকের দফতরের সামনে অবস্থান এবং এসএসসি অভিযানের ডাক।
এক কথায়, চাকরি হারানো শিক্ষকদের জন্য বেতন পোর্টালে নাম থাকা যেন একটি সাময়িক স্বস্তি — কিন্তু সমাধান নয়।
তাঁদের চোখে এখন একটাই লক্ষ্য — দ্রুত স্থায়ী সমাধান ও চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়ার সরকারি ঘোষণা। ততদিন আন্দোলন চলবেই।
তালা ভাঙার পাল্টা তালা! কসবা থেকে হুগলি—চাকরিহারাদের ক্ষোভে কাঁপছে রাজ্য