বেঙ্গালুরুতে এইচএমপি ভাইরাসের সন্ধান
বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি হাসপাতালে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)-এ আক্রান্ত আট মাসের এক শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। যদিও এই ভাইরাসটি চিনে সম্প্রতি দেখা দেওয়া এইচএমপি ভাইরাসের একই প্রজাতির কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নজরে রেখেছে এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।
ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তারিত তথ্য
শিশুটির শরীরে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তাকে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই নমুনা পরীক্ষায় এইচএমপি ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে যে, নমুনাটি কোনও সরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়নি। তবুও বেসরকারি হাসপাতালের পরীক্ষার ফলাফল সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে তারা।
‘ইন্ডিয়া টুডে’-র একটি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য দফতরের সূত্র উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “চিকিৎসার ভিত্তিতে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে আমরা বিশ্বাস রাখছি। তবে বিষয়টি নিয়ে আরও বিশদ তদন্ত করা হচ্ছে।”
এইচএমপি ভাইরাস: চিনের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র রয়েছে?
সম্প্রতি চিনে এইচএমপি ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রমণ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে বেঙ্গালুরুর ভাইরাসটি চিনে দেখা দেওয়া একই প্রজাতির কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “চিনে কোন প্রজাতির সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার বিশদ তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তাই এই ভাইরাসের প্রজাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।”
চিনের স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এটি একটি মরসুমি সংক্রমণ যা মূলত শীতকালে ছড়ায়। ভারতেও এই ভাইরাস নিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতে এইচএমপি ভাইরাস এবং প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতে এইচএমপিভির অস্তিত্ব নতুন নয়। দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো এই ধরনের সংক্রমণের মোকাবিলায় যথেষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মক ড্রিল’ আয়োজন করেছে। এতে দেখা গেছে যে, জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য দেশের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
কেরলের পদক্ষেপ: সতর্কতা জারি
কেরল সরকার ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সেখানে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং বয়স্কদের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনবহুল এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এইচএমপি ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে প্রভাব ফেলে এবং শিশুদের পাশাপাশি বয়স্ক এবং কম ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তিদের জন্য বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা প্রয়োজন:
- জনবহুল এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখুন এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন।
- শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
বেঙ্গালুরুর শিশুর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত হওয়া চিন্তার বিষয় হলেও, ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা এই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চিনের পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশের পরিস্থিতিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ভারত সরকার। প্রয়োজনে আরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে আপাতত স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে চললেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
চিনের পর হংকংয়ে হানা দিল এইচএমপিভি! আতঙ্ক না ছড়িয়ে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ কেরলের