Monday, December 1, 2025

‘বেঙ্গল লাইন’-এর ফের জোরালো উপস্থিতি বিজেপিতে, শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে দিল্লির নয়া বার্তা

Share

‘বেঙ্গল লাইন’-এর ফের জোরালো উপস্থিতি বিজেপিতে!

এক সময় বামফ্রন্ট শাসিত বাংলায় রাজনীতিতে ‘বেঙ্গল লাইন’ বা ‘কেরল লাইন’ শব্দবন্ধ খুবই পরিচিত ছিল। সিপিএমের সর্বভারতীয় নীতিনির্ধারণে বাংলা ও কেরলের মতপার্থক্য নতুন নতুন ‘লাইন’-এর জন্ম দিত। তবে বাম যুগ শেষের পরে সেই গুরুত্ব হারায়। এবার বিজেপির অন্দরে নতুন করে উঠে এসেছে এই ‘বেঙ্গল লাইন’-এর ছায়া।

সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কাশ্মীর সফর নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘‘প্রাণ আগে বাঁচান, তারপর বেড়াতে যান।’’ তাঁর কথায় রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় ওঠে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ নীতির সঙ্গে এমন মন্তব্য সাংঘর্ষিক কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

প্রথম দিকে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল না। রাজ্য নেতৃত্বও একটু চুপচাপ ছিল। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন স্পষ্ট করছে—শুভেন্দুর কথা তাঁর ব্যক্তিগত মত হলেও বাংলার বিশেষ পরিস্থিতির কথা ভেবেই সেটি বলা হয়েছে।

দলের অন্দরের মতে, জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উদ্বেগ স্বাভাবিক। কারণ, সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় বাংলাতেও বহু সময় নানা সন্ত্রাসবাদী ঘটনার ছায়া পড়ে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ‘বেঙ্গল লাইন’ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে—অর্থাৎ বাংলা ঘিরে বিজেপির আলাদা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা।

শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওটা বিরোধী দলনেতার নিজস্ব মত। তিনি জনতার মধ্যে ঘুরে বেড়ান। সাধারণ মানুষের উদ্বেগ তাঁর কথায় প্রতিফলিত হয়েছে।’’ একই সুর শোনা যাচ্ছে বিজেপি পরিষদীয় দলের বহু বিধায়ক এবং রাজ্য কর্মসমিতির নেতাদের মুখেও। অনেকে বলছেন, প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও দলের ভিতরে এই অবস্থান নিয়ে মতৈক্য তৈরি হয়ে গেছে।

এই কৌশলগত অবস্থানকে অনেকেই বলছেন বিজেপির নতুন ধরনের রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। কেন্দ্রীয় নীতিতে ফাটল না ধরিয়ে, আবার রাজ্যের বাস্তবতা সামনে এনে শুভেন্দুর মন্তব্যকে নিরুৎসাহিতও করা হচ্ছে না।

দিল্লির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘কাশ্মীরে হামলার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কতটা ক্ষতি হতে পারে, সেটাও ভাবতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ ঘিরে যা হচ্ছে, সেটাও বাংলার মানুষ দেখছেন। তাই কাশ্মীর নিয়ে বাংলার মানুষের উদ্বেগকে খাটো করে দেখা যায় না।’’

বাম আমলের মতোই এখন বিজেপিতেও বিশেষ করে বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখে আলাদা ‘লাইন’ তৈরি হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও বিজেপি আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘বেঙ্গল লাইন’ শব্দ ব্যবহার না করলেও, কার্যত সেই পথেই হাঁটছে।

এক বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘‘সব সময় বৈঠক ডেকে লাইন নির্ধারণ হয় না। কখনও কখনও দলের অন্দরেই বোঝাপড়া তৈরি হয়। এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে।’’ এইভাবে বিজেপিতে বাংলা ঘিরে আলাদা ব্যাখ্যা উঠে আসা বাংলার রাজনীতিতে নতুন দিক খুলতে চলেছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

বিমানে জ্বালানির সুইচ ত্রুটি! এফএএ সতর্ক করেছিল সাত বছর আগে, গুরুত্ব দেয়নি এয়ার ইন্ডিয়া?

Read more

Local News