হিজ়বুল্লার চিফ অফ স্টাফ তাবাতাবাই নিহত, উত্তপ্ত হল মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্যে ফের উসকে উঠল উত্তেজনা। লেবাননের রাজধানী বেইরুটের বুকে দিনের আলোয় ইজ়রায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হলেন হিজ়বুল্লার সশস্ত্র শাখার চিফ অফ স্টাফ হেতাম আলি তাবাতাবাই— এমনই দাবি করছে ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যম। দীর্ঘদিন ধরেই হিজ়বুল্লার সামরিক শক্তির অন্যতম মাথা হিসেবে পরিচিত তাবাতাবাইয়ের মৃত্যু নিঃসন্দেহে লেবানন-ইজ়রায়েল সংঘর্ষকে নতুন মোড়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বেইরুটে বিরল ইজ়রায়েলি অভিযান
রবিবার বিকেলে দক্ষিণ বেইরুটের শহরতলিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা। রয়টার্স জানিয়েছে, এই অভিযানে অন্তত চার জন নিহত এবং ২৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। বেইরুটে বহু মাস ধরে এমন হামলা হয়নি। ২০২৩-এর শেষ দিকে সংঘর্ষবিরতির পর ইজ়রায়েল সরাসরি লেবাননের রাজধানীতে হামলা চালানো থেকে বিরত ছিল। ফলে রবিবারের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
লেবাননের সেনাবাহিনী হামলার পর দ্রুত এলাকা ঘিরে ফেলে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবন, ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও আতঙ্কিত মানুষের ভিড়— গোটা অঞ্চল মুহূর্তে যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
তাবাতাবাই— হিজ়রুল্লার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা
ইজ়রায়েলি মিডিয়া দাবি করছে, নিহত ব্যক্তি হিজ়বুল্লার প্রধান নঈম কাসেমের পর সংগঠনের দ্বিতীয় শক্তিমান নেতা।
২০১৬ সালেই তাঁকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ ঘোষণা করেছিল মার্কিন সরকার। সিরিয়া ও ইয়েমেনে হিজ়বুল্লার বিশেষ বাহিনী পরিচালনায় তাঁর ভূমিকা ছিল বলে দাবি করে আমেরিকা।
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে জানানো হয়—
“বেইরুটের কেন্দ্রস্থলে হিজ়বুল্লার চিফ অফ স্টাফকে লক্ষ্য করে আইডিএফ সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হিজ়বুল্লার অস্ত্র সংগ্রহ ও সামরিক প্রস্তুতি বাড়ানোর মূল দায়িত্ব ছিল তাবাতাবাইয়ের উপর। আইডিএফ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সুপারিশেই নেতানিয়াহু এই অভিযান অনুমোদন করেন।
হিজ়বুল্লার নীরবতা ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত হিজ়বুল্লা কোনও সরকারি বিবৃতি দেয়নি। তবে সংগঠনের একটি বড়ো সামরিক মাথা খুন হওয়ায় জবাবি হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। লেবাননের রাজনৈতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে— এই ঘটনার জেরে আবারও সীমান্ত অঞ্চলে যুদ্ধের আবহ ফিরে আসতে পারে।
২০২৩-এর যুদ্ধ থেকে সংঘর্ষবিরতি— আবার কি আগুন জ্বলবে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজ়ায় ইজ়রায়েলের ব্যাপক হামলার পর দক্ষিণ লেবাননে সক্রিয় শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠী হিজ়বুল্লা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে। তেল আভিভ—বেইরুট সীমান্তজুড়ে হামলা-প্রতিহামলায় উত্তপ্ত ছিল গোটা এলাকা। প্রায় এক বছর ধরে চলা সংঘর্ষের পরে আমেরিকার মধ্যস্থতায় দু’পক্ষ সম্মত হয় সংঘর্ষবিরতিতে।
তবে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তাবাতাবাইয়ের মৃত্যু সেই নাজুক ভারসাম্য আবারও ভাঙতে পারে।
লেবানন-ইজ়রায়েল সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে ফের অস্থিরতা ও উদ্বেগ বাড়ছে।
কী হতে পারে পরবর্তী দৃশ্যপট?
- হিজ়বুল্লা প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে, যা সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধের পরিস্থিতি ফের জাগিয়ে তুলতে পারে।
- আমেরিকা ও ফ্রান্সের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ আবারও বাড়তে পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
- ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর হবে, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে।
মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের অসমাপ্ত সংঘাতের নতুন অধ্যায় শুরু হল কি না— তার উত্তর দেবে সময়। কিন্তু রবিবারের বেইরুট হামলা যে উভয়পক্ষকেই নতুন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা স্পষ্ট।

