Monday, December 1, 2025

বেআইনি ধর্মান্তরণ গুরুতর অপরাধ নয়: সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

Share

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

বেআইনি ভাবে ধর্মান্তরণ অপরাধ হলেও তা খুন, ধর্ষণ বা ডাকাতির মতো গুরুতর অপরাধ নয়—এমনই মন্তব্য করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি একটি ধর্মান্তরণ মামলায় অভিযুক্তকে জামিন মঞ্জুর করে শীর্ষ আদালত এই মন্তব্য করেছে।

কী ছিল মামলা?

উত্তরপ্রদেশের একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরকে বেআইনি ভাবে ধর্মান্তরণ করানো হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল স্থানীয় আদালতে। কিন্তু নিম্ন আদালত এবং পরবর্তীতে ইলাহাবাদ হাই কোর্টেও জামিনের আবেদন নাকচ হয়। শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি ওঠে এবং বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ অভিযুক্তকে জামিন মঞ্জুর করে।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জানায়, জামিনের আবেদন নাকচ করার জন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল না। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বেআইনি ধর্মান্তরণ একটি অপরাধ হলেও তা খুন, ডাকাতি বা ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের স্তরে পড়ে না।

বিচারপতিরা বলেন, হাই কোর্টের উচিত ছিল নিজস্ব বিচক্ষণতা প্রয়োগ করা এবং জামিন প্রসঙ্গে ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাঁরা উল্লেখ করেন, প্রতি বছর বিচারপতিদের জন্য যে সমস্ত কর্মশালা এবং সম্মেলন আয়োজিত হয়, তার মূল উদ্দেশ্যই বিচারকদের আইনি ধারা সম্পর্কে সচেতন করা এবং জামিনের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রদান।

নিম্ন আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নিম্ন আদালত কেন অভিযুক্তের জামিন আবেদন খারিজ করেছিল, তা নিয়েও আলোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারি নিম্ন আদালত কেন জামিন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। তবে হাই কোর্টের কাছ থেকে আমরা অধিক বিচক্ষণতার প্রত্যাশা করি।’’

সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, নিম্ন আদালতগুলি প্রায়ই সাহসের অভাবে জামিন দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পিছিয়ে থাকে, যদিও এর জন্য দায়ী আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতাও।

জামিনের নীতিমালা ও বিচারকদের দায়িত্ব

বিচারপতিরা বলেন, ভারতের ফৌজদারি আইনে জামিন একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। সিআরপিসি-র ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী জামিন প্রদান সংক্রান্ত নির্ধারিত নিয়ম ও বিচারপতিদের বিচক্ষণতার ওপর জোর দেওয়া হয়। তবুও, এ ধরনের মামলায় নিম্ন আদালতগুলির পক্ষ থেকে প্রায়ই জামিন নাকচ করার প্রবণতা দেখা যায়, যা কাম্য নয়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও গুরুত্ব

ধর্মান্তরণ সংক্রান্ত বিতর্কিত বিষয়গুলি ভারতে বেশ সংবেদনশীল। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শুধু মামলাটিকে নয়, পুরো বিষয়টিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করেছে। বেআইনি ধর্মান্তরণ অপরাধ হলেও তা কতটা গুরুতর, সে বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলার রায়দান প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

উপসংহার

সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ শুধু এই মামলাতেই নয়, দেশের বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে বিচারপতিদের ভূমিকা এবং আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। বেআইনি ধর্মান্তরণ আইন নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি জামিন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বিচারকদের বিচক্ষণতা ও সাহসী ভূমিকা অপরিহার্য। এই রায় সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।

আদানি-পুত্রের বিয়ে: জাঁকজমক না কি সাদামাটা আয়োজন?

Read more

Local News