এক মাসে বাংলায় ৪৪% বর্ষার ঘাটতি!
আকাশে কালো মেঘ জমলেও এক ফোঁটা বৃষ্টি যেন অধরাই রয়ে যাচ্ছে! পশ্চিমবঙ্গের গরমে নাভিশ্বাস উঠছে, কিন্তু প্রতীক্ষিত বর্ষার দেখা নেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, রাজ্যে গত এক মাসে গড় বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশ। কিছু জেলায় ঘাটতির পরিমাণ ১০০ শতাংশের কাছাকাছি! অর্থাৎ, বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও, বাস্তবে বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
বিশেষ করে কলকাতা শহরে এক মাসে যেখানে প্রয়োজন ছিল এক রকম টানা বৃষ্টির, সেখানে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ শতাংশ। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বারবার বলা হলেও, আকাশের মুখ ভার থাকলেও তা বৃষ্টিতে রূপ নিচ্ছে না। চৈত্র মাসে শুরু হওয়া এই রুক্ষ গরমে রাজ্যের মানুষ কার্যত হাঁসফাঁস করছেন।
আলিপুর হাওয়া অফিসের মতে, সোমবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে বজ্রবিদ্যুৎ ও দমকা হাওয়ার সঙ্গে। হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার হতে পারে। হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া—এই জেলাগুলিতে একই রকম আবহাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এমনকি মঙ্গলবারেও কিছু জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস।
উত্তরবঙ্গও পিছিয়ে নেই। রবিবার থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার থেকে কোচবিহার ও মালদহেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দুই বঙ্গেই ঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
তবে এত কিছুর পরেও বাস্তব চিত্র মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ দিনাজপুরে বৃষ্টির ঘাটতি ১০০ শতাংশ। মালদহে ৯৮ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনায় ৮০ শতাংশ, হুগলিতে ৯০ শতাংশ, হাওড়ায় ৬০ শতাংশ, নদিয়ায় ৭৫ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৮৪ শতাংশ, জলপাইগুড়িতে ৭৬ শতাংশ, দার্জিলিঙে ৭৮ শতাংশ, কালিম্পঙে ৮৬ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৮৪ শতাংশ, এবং কোচবিহারে ৯০ শতাংশ।
তবে কিছুটা স্বস্তির খবর তিনটি জেলা থেকে এসেছে— পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাতে রাজ্যের সামগ্রিক বৃষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়নি।
চৈত্রের এই সময় থেকেই বাংলার বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। গ্রীষ্ম আরও গরম হবে বলেই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। ফলে আপাতত বৃষ্টির ঘাটতি পূরণের খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১.৬ ডিগ্রি বেশি। শুক্রবার দিনভর আকাশ ছিল মেঘলা, ফলে তাপমাত্রা খানিকটা কমে গিয়েছিল—সর্বোচ্চ ছিল ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সব মিলিয়ে, বাংলা এখন তাকিয়ে রয়েছে এক পশলা কালবৈশাখীর দিকেই, যা হয়তো গরমে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিতে পারে। তবে আদৌ সেই আশার বৃষ্টি হবে তো? উত্তর দেবে আগামী সপ্তাহের আকাশ।
চাকরি বাতিলের ধাক্কায় শিক্ষক সঙ্কট, রাজ্যের স্কুলগুলিতে অনিশ্চয়তা