Sunday, November 30, 2025

বুথে ঢিলেঢালা নিয়মে নতুন রাজনৈতিক তরঙ্গ: বিএলএ নিয়োগে ছাড়, শুভেন্দুর স্বাগত, তৃণমূলের ক্ষোভে তপ্ত বঙ্গরাজনীতি

Share

বুথে ঢিলেঢালা নিয়মে নতুন রাজনৈতিক তরঙ্গ!

ভোটের মাঠে ফের এক নতুন বিতর্ক। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে এবার ঢিলেঢালা হল বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) নিয়োগের নিয়ম। এত দিন পর্যন্ত যে প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে কেউ বিএলএ হতে চাইতেন, তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে ওই বুথের ভোটার হতে হত। কিন্তু মঙ্গলবার কমিশনের নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এখন থেকে নির্দিষ্ট বুথের ভোটার না হলেও চলবে, সংশ্লিষ্ট বিধানসভার যে কোনও ভোটার বিএলএ হতে পারবেন।

এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র তরঙ্গ—বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেখানেই এই সিদ্ধান্তকে “সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়” বলে স্বাগত জানিয়েছেন, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে “বিজেপি ও কমিশনের গাঁটবন্ধন” বলে তীব্র সমালোচনা করেছে।


কমিশনের নতুন নির্দেশিকা: কী বদল হল?

২০২৩ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে কোনও বুথে দায়িত্ব নিতে হলে সেই বুথেরই ভোটার হতে হত।
এই নিয়মের কারণেই বহু এলাকায়, বিশেষ করে গ্রামীণ বাংলায়, রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষে পর্যাপ্ত বুথ এজেন্ট নিয়োগে সমস্যা হচ্ছিল।

কিন্তু ২০২৫ সালের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানিয়েছে, এখন থেকে বিএলএ হতে হলে শুধু ওই বিধানসভার ভোটার হলেই যথেষ্ট।
অর্থাৎ, একই বিধানসভা এলাকার মধ্যে থেকে একজন ভোটার একাধিক বুথে এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

কমিশন এই নির্দেশ পাঠিয়েছে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকদের কাছে।
এই পরিবর্তনের লক্ষ্য—কমিশনের দাবি অনুযায়ী—“বুথ স্তরে প্রক্রিয়া মসৃণ করা ও দলগুলিকে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।”


শুভেন্দুর প্রশংসা: ‘সকল দলের জন্য উপকারী সিদ্ধান্ত’

বিজেপি নেতা ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লিখেছেন,

“জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। এই পরিবর্তনে সব রাজনৈতিক দলই উপকৃত হবে। বিএলএ নিয়োগের পরিধি বাড়লে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে।”

তিনি আরও দাবি করেন, আগের নিয়ম “অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিল” ছিল এবং তাতে অনেক রাজনৈতিক দলের বুথ-স্তরের প্রতিনিধিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই এই নিয়ম শিথিল করার দাবি জানাচ্ছিল। এমনকি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায় কমিশনের কাছে একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা তখন আংশিকভাবে গৃহীত হয়েছিল।


তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়া: ‘বিজেপির দুর্বলতা ঢাকতে সাহায্য করছে কমিশন’

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই পরিবর্তনকে একেবারে অন্য চোখে দেখছে।
দলীয় সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি,

“এই নির্দেশিকা আসলে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। যেখানে বিজেপির সংগঠন দুর্বল, সেখানে এখন বাইরে থেকে লোক এনে বিএলএ করা যাবে।”

তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন,

“বিজেপি যখন বুথে এজেন্ট দিতে পারছে না, তখন কমিশন যেন তাদের হয়ে লোক জোগাড় করছে। এটা বিজেপি ও কমিশনের গাঁটবন্ধন ছাড়া আর কিছুই নয়।”

শাসকদলের মতে, এই নির্দেশিকাই প্রমাণ করছে যে নির্বাচন কমিশন “নিরপেক্ষতার পথ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে”।
তৃণমূল নেতাদের যুক্তি, নির্বাচনী পরিবেশের এমন সংবেদনশীল সময়ে এসআইআর (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া চলাকালীন এই পরিবর্তন সন্দেহজনক উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।


রাজনৈতিক অর্থ ও প্রভাব

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে পড়বে এসআইআর প্রক্রিয়ার তথ্য সংগ্রহে
কারণ, এখন বিজেপি বা অন্যান্য দল সহজেই অন্য এলাকার কর্মীদের এনে তথ্য যাচাইয়ে অংশগ্রহণ করাতে পারবে।
অন্যদিকে, ভোটের দিন এই নিয়ম কার্যকর হলে, এক বুথ থেকে অন্য বুথে এজেন্ট বদল করা সহজ হবে—যা তৃণমূলের মতে, “সংগঠিত কারচুপির পথ খুলে দিতে পারে।”


শেষ কথা

একই সিদ্ধান্ত—দুই বিপরীত প্রতিক্রিয়া।
একদিকে শুভেন্দুর দাবি, “কমিশন এখন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে”, অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, “নির্বাচন কমিশন বিজেপির সহকারী সংস্থা হয়ে উঠেছে।”

এখন দেখার, এই নতুন নিয়ম শুধু বুথ-স্তরের উপস্থিতি বদলাবে, নাকি রাজনৈতিক আস্থার সমীকরণও উল্টে দেবে।
যা-ই হোক, স্পষ্ট—২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিএলএ বিতর্কই হতে চলেছে বঙ্গ রাজনীতির নতুন কেন্দ্রবিন্দু। 🗳️

Read more

Local News