রাশিয়া থেকে কিনে ভারতে স্থিতিশীলতা!
গত এক বছরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম যখন রীতিমতো লাফিয়ে বেড়েছে, তখন ভারত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১২০ ডলার ছুঁয়েছিল, সেখানে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে দেশের বাজারে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভারতের কৌশলগত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি সফল উদাহরণ।
কেন এমন পরিস্থিতি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। ইউরোপ এবং আমেরিকা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করেছে। এর ফলে রাশিয়া বেশ কিছুটা সমস্যায় পড়লেও, ভারত এবং চিনের মতো দেশগুলির জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সুযোগ। কারণ রাশিয়া তখন স্বল্প দামে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
ভারতের সিদ্ধান্ত: রাশিয়া থেকে তেল কেনা
ভারত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি বড় আকারে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে। রাশিয়ার অফার করা ডিসকাউন্ট রেট ছিল আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ২০–২৫ শতাংশ কম। ফলে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েও ঘরোয়া বাজারে তার প্রভাব পড়তে দেয়নি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তখন ভারতে সেই তুলনায় দাম অনেকটাই স্থিতিশীল ছিল। সাধারণ মানুষও সেই উপকার পেয়েছেন।
সরকারি স্তরে পরিকল্পনা
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং মুদ্রাস্ফীতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। কারণ অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে গেলে, শুধু জ্বালানি নয়, সমস্ত পণ্য পরিবহন খরচও বাড়ে। তার ফল সরাসরি সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়ে।
শুধু মূল্য নয়, কূটনৈতিক বার্তা
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। পশ্চিমা দেশগুলির চোখ রাঙানির মধ্যেও ভারত তার জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে এটি ভারতের স্বাধীন অবস্থানকেই তুলে ধরে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন?
বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়েই আশঙ্কা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, ওপেক গোষ্ঠীর উৎপাদন নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির চাহিদা—সবকিছু মিলিয়ে তেলের দাম কখনও বেড়ে যায়, কখনও কমে। তবে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা কৌশল দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও সুরক্ষা দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণ মানুষের দিক থেকে দেখতে গেলে, এই মুহূর্তে ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি আরও অস্থির হলে দাম বাড়তেই পারে। তবুও, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের এই কৌশলিক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
গোপালগঞ্জে উত্তেজনা: ‘নাইন সিরকার’ ওসাম চারজনের মৃত্যু, কারফিউ জারি

