Monday, February 24, 2025

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যুদ্ধ: মাত্র ৩৮ মিনিটে ধ্বংস ৫০০ সেনা, প্রাসাদ, জাহাজ!

Share

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যুদ্ধ

যুদ্ধের ইতিহাসে বহু দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের নাম আমরা জানি। বিশ্বযুদ্ধ বা ভিয়েতনাম যুদ্ধ যেমন বছরের পর বছর ধরে চলেছিল, তেমনই রোমান-পার্সিয়ান কিংবা অ্যাংলো-ফরাসি যুদ্ধও ৬০০-৭০০ বছর ধরে সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ছোটখাটো যুদ্ধও এক থেকে দেড় দিন ধরে চলার উদাহরণ রয়েছে। তবে, আপনি কি জানেন যে একটি যুদ্ধ মাত্র ৩৮ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল?

এই যুদ্ধের নাম অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধ। ১৮৯৬ সালের ২৭ অগস্ট ঘটে যাওয়া এই যুদ্ধ ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যুদ্ধ হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। যদিও কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু এতো কম সময়ের মধ্যেই এত কিছু ঘটে গিয়েছিল যা এক কথায় অবিশ্বাস্য।

যুদ্ধের কারণ

জাঞ্জিবার, বর্তমান তানজানিয়ার অন্তর্গত একটি অর্ধ স্বশাসিত দ্বীপপুঞ্জ, ১৪৯৯ সালে পর্তুগিজদের দ্বারা দখল হয়েছিল। কিন্তু ১৬৯৮ সালে ওমানের সুলতান এই দ্বীপের দখল নেন। পরে সুলতান মাজিদ বিন সইদ ১৮৫৮ সালে জাঞ্জিবারকে স্বাধীন ঘোষণা করেন এবং ব্রিটিশরা তা স্বীকৃতি দেয়।

১৮৯৬ সালে ব্রিটিশপন্থী সুলতান হামাদ বিন থুওয়াইনির আকস্মিক মৃত্যু জাঞ্জিবারে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে। থুওয়াইনি-র মৃত্যুর পর সুলতান খলিদ বিন বারগাশ গদিতে বসেন, যা ব্রিটিশদের পছন্দ ছিল না। ব্রিটিশরা চেয়েছিল ক্ষমতা তাঁদের অনুগত নেতা হামুদ বিন মহম্মদের হাতে থাকুক। কিন্তু খলিদ এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন।

যুদ্ধের সূচনা

১৮৯৬ সালের ২৭ অগস্ট সকাল ৯টায় ব্রিটিশ বাহিনী পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ এবং ১৫০ নৌসেনা নিয়ে জাঞ্জিবারের সুলতানের প্রাসাদে গুলি বর্ষণ শুরু করে। খলিদও প্রস্তুত ছিলেন, তাঁর বাহিনীতে স্থানীয় অনুগতরা এবং একটি ছোট নৌবাহিনী ছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ এবং আধুনিক অস্ত্রের সামনে খলিদের প্রতিরোধ মাত্র কয়েক মিনিটেই ভেঙে পড়ে।

ধ্বংসের মাত্রা

ব্রিটিশ বাহিনীর হামলায় মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রায় ৫০০ খলিদ-অনুগত সেনার মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ এতটাই তীব্র ছিল যে খলিদের প্রাসাদ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং তাঁর যুদ্ধজাহাজও ডুবিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে খলিদ যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে জার্মান দূতাবাসে পালিয়ে যান।

যুদ্ধের ফলাফল

৩৮ মিনিটের মধ্যেই এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। ব্রিটিশরা জাঞ্জিবারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নেয় এবং হামুদ বিন মহম্মদকে সুলতান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। খলিদ জার্মান দূতাবাসে আশ্রয় নিলেও পরে তাঁকে বন্দি করে সেশেলস দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক গুরুত্ব

যদিও এটি মাত্র ৩৮ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল, অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কৌশলগত আধিপত্য এবং তাদের সামরিক ক্ষমতার প্রমাণ ছিল এই যুদ্ধ।

অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের ইতিহাস সম্ভবত বিশ্বে বিরল। এটি শুধুই যুদ্ধের নয়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আগ্রাসী নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

Read more

Local News