Sunday, November 30, 2025

বিশ্বকাপ জয়ে একই সাফল্য, তবু আয়ে আকাশ–পাতাল ফারাক! হরমনদের তুলনায় বহু আলো পিছনে দৃষ্টিহীন দীপিকারা

Share

তবু আয়ে আকাশ–পাতাল ফারাক! হরমনদের তুলনায় বহু আলো পিছনে দৃষ্টিহীন দীপিকারা

ভারতের মহিলা ক্রিকেটে যেন উৎসবের মরসুম। সপ্তাহ তিনেক আগে হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে ভারত মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। আর সদ্য রবিবার দৃষ্টিহীন মহিলা ক্রিকেট দল অপরাজিত থেকে জিতে নিল দৃষ্টিহীন মহিলাদের বিশ্বকাপ—ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে। দুই দলের সাফল্য সমানভাবে দেশকে গর্বিত করলেও, তাঁদের আয়, সম্মান, সুবিধা ও পরিকাঠামোর তুলনা করলে স্পষ্ট দেখা যায়—দু’টি পৃথিবী দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে

❖ একদল রাতারাতি কোটিপতি, অন্যদল পায় কয়েক হাজার টাকা

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যরা এখন বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রয়েছেন। তাদের আয়—

  • বছরে A শ্রেণির ক্রিকেটাররা ৫০ লক্ষ টাকা
  • টেস্ট ম্যাচ ফি: ১৫ লক্ষ টাকা
  • ওয়ান ডে: ৬ লক্ষ টাকা
  • টি-টোয়েন্টি: ৩ লক্ষ টাকা

অন্যদিকে, দৃষ্টিহীন মহিলা দলের বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো—

  • ম্যাচপিছু আয় মাত্র ৩ হাজার টাকা
  • কোনও কেন্দ্রীয় চুক্তি নেই
  • প্রচার, স্পনসর—সবই প্রায় নেই
  • দান, সামান্য স্পনসরশিপ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উপর নির্ভরশীল জীবন

একদল বিশ্বকাপ জেতার রাতে কোটিপতি, আর অন্যদলের হাতে কেবল কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান—এটাই আজকের বাস্তব।

❖ দৃষ্টিহীন দলের দায়িত্বে কে? কেন নেই বোর্ডের ছায়া?

দৃষ্টিহীন ক্রিকেটাররা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)-এর অংশ নন। তাঁদের দেখভালের দায়িত্ব—

  • সিএবিআই (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্লাইন্ড ইন ইন্ডিয়া)
  • কিট, প্রশিক্ষণ, বিদেশ সফর, ম্যাচ আয়োজন—সবই সিএবিআই ও দাতাদের উদ্যোগে
  • সরকারি বা নিবদ্ধ কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে

এ কারণেই দৃষ্টিহীন ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ আজও অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঢাকা।

❖ অতীতে একই অবস্থা ছিল মহিলা ক্রিকেট দলেরও

আজ হরমনদের প্রচার, স্পনসরশিপ, টাকায় কোনও অভাব নেই। কিন্তু একসময় ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলও বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তখন—

  • ম্যাচপিছু আয় ছিল সামান্য
  • কিটের জন্যও আলাদা সাহায্যের প্রয়োজন হতো
  • বিদেশ সফরে সরকারি সাহায্য পাওয়াই ছিল বড় ব্যাপার
  • প্রচার ছিল শূন্যের কোঠায়

বিসিসিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরই বদলে গেছে ছবিটা—বেতন বেড়েছে, সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, সম্মান বেড়েছে।

❖ তাহলে দীপিকাদের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়িয়ে?

দৃষ্টিহীন মহিলা দলের মেয়েরা, যেমন দীপিকা ও তাঁর সতীর্থরা—

  • বিশ্বকাপ জিতছেন
  • অপরাজিত থেকে দেশের জন্য সোনা লিখছেন
  • প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিভা দেখাচ্ছেন

তবু তাঁরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু নন। দেশে জয় এলেও টেলিভিশনের পর্দা তাঁদের উদ্দেশে আলো জ্বেলেনা, বিজ্ঞাপন সংস্থার দরজা খুলে যায় না, তাদের আয় শোচনীয়ভাবে কম থাকে।

❖ দেশের করা উচিত কী?

সমাজের বিভিন্ন মহল ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলছে—

  • দৃষ্টিহীন ক্রিকেটাররা কি বিসিসিআইয়ের আওতায় আসবেন?
  • তাঁদের জন্য কি আলাদা কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা হবে?
  • সরকারি সাহায্য কি বাড়বে?
  • কর্পোরেট স্পনসর কি তাঁদের পাশে দাঁড়াবে?

কারণ বিশ্বকাপ জয় মানে শুধু ট্রফি নয়—সুযোগ, সুরক্ষা, সমান সম্মানও।

❖ উপসংহার

একদিকে হরমনদের লাখো টাকার পুরস্কার, অন্যদিকে দীপিকাদের তিন হাজার টাকার ম্যাচ ফি—দুইই ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের গল্প, কিন্তু আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বিশ্বকাপ জিতে দুই দলই প্রাপ্য দেশের ভালবাসা ও সমান মর্যাদা। এখন দেখার, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও সরকার ভবিষ্যতে দৃষ্টিহীন ক্রিকেটারদের পাশে কতটা দাঁড়ায়।

Read more

Local News