রাজ্যপালকে কড়া বার্তা সুপ্রিম কোর্টের
তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবির ভূমিকা নিয়ে একপ্রকার প্রশ্ন তুলেই কড়া পর্যবেক্ষণ পেশ করল সুপ্রিম কোর্ট। স্পষ্ট জানিয়ে দিল—রাজ্য বিধানসভায় কোনও বিল পাশ হলে, তাকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলিয়ে রাখা সংবিধান মেনে চলে না। এমনকি রাজ্যপালকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল তাঁর সাংবিধানিক কর্তব্য।
এই রায়কে ইতিমধ্যেই ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। তাঁর মতে, “এটা শুধু তামিলনাড়ুর জয় নয়, ভারতের প্রতিটি রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারের সুরক্ষা।”
কী নিয়ে এত বিতর্ক?
বিগত কয়েক মাস ধরে তামিলনাড়ুর বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিল রাজভবনে পড়ে রয়েছে, যেগুলিতে রাজ্যপাল আরএন রবি সায় দেননি। না ফিরিয়ে দিয়েছেন, না পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতির কাছে। তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার এই বিলম্বকে ‘সংবিধান পরিপন্থী’ বলে দাবি করে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?
বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবন-এর বেঞ্চ মঙ্গলবার জানিয়ে দেয়, “রাজ্যপাল অনির্দিষ্ট কালের জন্য কোনও বিল আটকে রাখতে পারেন না। এটা বৈধ নয়।” আদালত আরও বলেছে, রাজ্যপাল তিনটি পথের একটিই বেছে নিতে পারেন—
- বিলটিতে সম্মতি দেওয়া
- সেটিকে বিধানসভায় ফেরত পাঠানো
- রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া
এই সিদ্ধান্ত তিন মাসের মধ্যে নিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সংবিধানের কোন দিক তুলে ধরল আদালত?
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপালের ভূমিকা মূলত ‘আনুষ্ঠানিক’ বা ‘নমিনাল হেড’-এর মতো। বিধানসভায় গৃহীত কোনও বিলের ক্ষেত্রে তিনি ‘ডিসক্রিশনারি পাওয়ার’ ব্যবহার করতে পারেন ঠিকই, তবে সেটারও একটি সীমা রয়েছে। আদালতের মতে, এই সীমা লঙ্ঘন করলেই তা অসাংবিধানিক হয়ে দাঁড়ায়।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেন, “আজকের রায় ভারতের ফেডারাল কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করল। এটি তামিলনাড়ুর বিজয়, কিন্তু একইসঙ্গে ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধানেরও বিজয়।”
তিনি আরও বলেন, “রাজ্যপাল দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলিকে আটকে রাখছিলেন। সেই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের জবাব সুপ্রিম কোর্ট দিয়ে দিয়েছে।”
কী হতে পারে এর পর?
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শুধু তামিলনাড়ুই নয়, গোটা দেশে একটি নজির তৈরি করল। কারণ রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকার সংঘাত একাধিক রাজ্যে চোখে পড়েছে সম্প্রতি—যেমন পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ইত্যাদি। এখন থেকে রাজ্যপালদের আর বিলের ফাইল দীর্ঘদিন টেবিলে পড়ে থাকতে দেবে না আদালত।
এই রায়ের ফলে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার দিকে আরও এক ধাপ এগোল ভারতীয় গণতন্ত্র।
পুরুষের ত্বকে ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০% বেশি! সানস্ক্রিন মাখছেন ঠিকঠাক?