Monday, December 1, 2025

বিলেতে বাংলার বাণিজ্যের বার্তা: মমতার শিল্প সম্মেলনে সাফল্যের ছোঁয়া

Share

মমতার শিল্প সম্মেলনে সাফল্যের

তুখোড় রাজনীতিক এবং প্রশাসক হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এক সহজ-সরল এবং আন্তরিক ব্যক্তিত্ব রয়েছে। ইংরেজরা যাকে বলে ‘চার্মিং’। তাঁর বক্তৃতার সময় সেই মোহিনী ব্যক্তিত্বই সকলের সামনে ধরা দেয়। লন্ডনের শিল্প সম্মেলনে মমতার উপস্থিতি এবং বক্তব্যে সেই আবেদন স্পষ্ট ফুটে উঠল।

বাণিজ্যের মানদণ্ডে বাংলার জয়গাথা

একসময় যেখান থেকে ব্রিটিশরা ব্যবসার মানদণ্ড হাতে নিয়ে ভারতবর্ষ শাসন করেছিল, সেই ব্রিটেনে এবার বাংলার উন্নয়নের গল্প শোনাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লন্ডনের বণিক মহলের সামনে তিনি বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং কর্মসংস্থানের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর কথায় ছিল আত্মবিশ্বাস এবং বাস্তব তথ্যের সংমিশ্রণ।

মমতা জানান, ভারতের জাতীয় জিডিপি বৃদ্ধির হার যেখানে ৬.৩৭ শতাংশ, সেখানে বাংলায় তা ৬.৮০ শতাংশ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে বাংলায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৭ শতাংশ, যা এখন কমে মাত্র ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এমন ইতিবাচক পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বাংলায় বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান।

শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও পরিকাঠামো

শিল্পের উন্নয়নে পরিবেশ ও পরিকাঠামো কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মমতার বক্তৃতায় বারবার উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “বাংলায় আর কোনও বনধ হয় না। ধর্মঘটের দিনগুলো এখন অতীত। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত রেখেই আমরা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি।” দক্ষ জনবল তৈরিতে রাজ্যের আইটিআই এবং পলিটেকনিক কলেজগুলোর প্রসঙ্গও উঠে আসে তাঁর ভাষণে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে ছ’টি নতুন শিল্প করিডর তৈরি হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এনে দেবে। এ ছাড়াও ডেউচা-পাঁচামি প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন রাজ্যের শক্তি ক্ষেত্রে আগামী একশো বছরের জন্য নিশ্চিন্ততা দেবে বলে তিনি আশাবাদী।

মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নতি

ব্রিটিশ বণিক মহলের সামনে মমতা বাংলার মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলায় মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আমরা দেশে এক নম্বরে। আমার দল তৃণমূল কংগ্রেসে ৩৯ শতাংশ মহিলা সাংসদ রয়েছেন, যা অনেকের পক্ষেই কল্পনার বাইরে।”

এ ছাড়া বাংলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়নের গল্পও তিনি শোনান। তাঁর মতে, বাংলার মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাবলম্বী।

বন্ধুত্বের বার্তা ও সহযোগিতার প্রস্তাব

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বিনিয়োগ আহ্বান জানিয়েই থেমে থাকেননি। তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের কাছেও কলকাতা-লন্ডন সরাসরি উড়ান পরিষেবা চালুর আবেদন জানান। তাঁর মজার সুরে দেওয়া প্রস্তাব ছিল, “যে সংস্থা এই পরিষেবা শুরু করবে, রাজ্য সরকার তাদের জন্য বিশেষ ছাড় এবং রাজকীয় অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করবে।”

সম্মেলনের সমাপ্তি ও আশাবাদ

মমতার বক্তৃতা শেষে করতালির ঝড় ওঠে সম্মেলন হলে। উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, ফিকির প্রেসিডেন্ট হর্ষবর্ধন আগরওয়াল এবং আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

বাংলার উন্নয়নের এই কাহিনি ব্রিটিশ শিল্প মহলের মনে কতটা সাড়া ফেলতে পারবে, তা সময়ই বলবে। তবে মমতার আন্তরিকতা এবং তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কনকনে ঠান্ডায় লন্ডনে মমতা: বিলেতে শুরু ছয় দিনের কর্মসূচি!

Read more

Local News