বিমানে জ্বালানির সুইচ ত্রুটি!!
১২ জুন অহমদাবাদ বিমানবন্দরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশ্ন উঠছে—এই দুর্ঘটনা কি এড়ানো যেত? ভারতের এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)-র প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে, বিমানের জ্বালানির সুইচ ভুলভাবে ‘কাটঅফ’ মোডে চলে যাওয়াই দুর্ঘটনার মূল কারণ।
এই সুইচ ত্রুটির বিষয়টি কিন্তু নতুন নয়। ২০১৮ সালেই আমেরিকার ফেডেরাল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বোয়িং ৭৩৭ মডেলের বিমানের জ্বালানির সুইচ ডিজাইনে ত্রুটির কথা জানিয়ে উপদেশাবলি জারি করেছিল। জানানো হয়েছিল, অনেক বিমানে ‘লকিং ফিচার’ অনুপস্থিত থাকায় জ্বালানির সুইচ দুর্ঘটনাবশত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া সেই সতর্কবার্তাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, এটি ছিল শুধু পরামর্শ, আইনত বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাই বোয়িংয়ের ওই বিশেষ মডেলের বিমানে সুইচ পরীক্ষা বা সংস্কারের পথে হাঁটেনি তারা। অথচ, সতর্কতা মানলে হয়তো ১২ জুনের সেই ভয়াল দিনটির মুখোমুখি হতে হতো না ২৪২ জন যাত্রীকে।
তদন্ত রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিমান রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’টি ইঞ্জিন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানির সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’-এ চলে যায়। ককপিট রেকর্ডিং থেকে জানা গিয়েছে, এক পাইলট বিস্ময়ে অন্য পাইলটকে প্রশ্ন করেছিলেন, “তুমি বন্ধ করে দিলে কেন?” অন্য পাইলট উত্তর দেন, “আমি কিছু বন্ধ করিনি!”
পাইলটেরা দু’টি সুইচই ফের ‘রান’-এ আনার চেষ্টা করেন। ইঞ্জিন-২ কিছুক্ষণের জন্য চালুও হয়, কিন্তু ইঞ্জিন-১ আর শুরু করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সেই এআই-১৭১ বিমানে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি-সহ ২৪২ জন ছিলেন। বেঁচে গেছেন মাত্র একজন। সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ২৬০ জনের।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিমান যখন সদ্য উড্ডয়ন করেছে, তখন পাইলটদের ভুল করে জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে ফেলার প্রশ্নই ওঠে না। এ ধরনের সুইচ সাধারণত রানওয়ে ছাড়ার আগে বা অবতরণের সময় ব্যবহার হয়। মাঝ আকাশে তা বন্ধ করার কথা ভাবাই যায় না। ফলে যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া এই ঘটনার অন্য কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এফএএ-র সেই ২০১৮ সালের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭-এর এই সুইচের ‘লকিং ফিচার’ নিয়ে সমস্যার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বোয়িং ৭৮৭-৮ জেটেও একই ডিজাইন ব্যবহৃত হয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়া যদিও জানিয়েছে, তারা তখনকার নিয়ম মেনেই চলেছিল। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি সুইচ পরীক্ষা করানো হতো, তবে কী ২৬০ জন প্রাণহানি ঠেকানো যেত না?
ঘটনার পর এখন এয়ার ইন্ডিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। এই দুর্ঘটনা গোটা দেশের বিমান সুরক্ষা নীতিতে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল। নিরাপত্তার বিষয়ে শুধু নিয়ম মানলেই যথেষ্ট নয়, সচেতনতা আর সতর্কতা এখন আরও জরুরি।
ক্রিকেটার চাহালের সঙ্গে নাম জড়ানো আরজে মাহবিশের নতুন চমক, কিনে নিলেন নিজস্ব ক্রিকেট দল!

