Monday, December 1, 2025

বিপিএলে গড়াপেটার ছায়া! সন্দেহের জেরে খসড়া তালিকা থেকে বাদ আট ক্রিকেটার, প্রমাণ চাইছেন একজন

Share

বিপিএলে গড়াপেটার ছায়া!

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরুর আগে এবারের মৌসুমে যেন আরও কড়াকড়ি শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আগের কয়েকটি আসরে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে নাম জড়িয়েছিল এমন আট ক্রিকেটারকে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি খসড়া তালিকা থেকেই বাদ দিল বোর্ড। ফলে দল বাছাইয়ের প্রথম ধাপ থেকেই বিতর্কের অবসান ঘটাতে চায় বিসিবি। কিন্তু বাদ পড়া ক্রিকেটারদের একজন ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন। প্রকাশ্যেই বোর্ডের কাছে দাবি তুলেছেন— তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে হবে।

লাল তালিকাভুক্ত আট ক্রিকেটার বাইরে

বিসিবি গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জানাচ্ছিল, দুর্নীতি বিরোধী নীতিতে তারা এবার কোনও রকম ছাড় দেবে না। সেই মতোই বোর্ডের ‘রেড লিস্ট’-এ থাকা আট জন ক্রিকেটারের নাম বিপিএলের খসড়া তালিকায় রাখা হয়নি। এই আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ— বিগত বিপিএলে ম্যাচ গড়াপেটার চেষ্টা করা অথবা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সন্দেহ।

যে আট জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন—
আনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন, সফিউল ইসলাম, আলাউদ্দিন বাবু, সুনজামুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, নিহাদুজ্জামান এবং মুনির হাসান খান।

বিসিবির ইন্টিগ্রিটি ইউনিট একেবারেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে বিপিএলের মতো বড় আসরে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হবে না।

বিতর্ক এড়াতেই কঠোর সিদ্ধান্ত

বিসিবির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের নিয়ে নতুন করে ঝুঁকি নিতে চাই না। বিপিএলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে যাতে কোনও রকম জুয়া সিন্ডিকেট বা গড়াপেটা চক্রের প্রভাব না পড়ে, তাই শুরুতেই কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে বোর্ড।

প্রমাণ চাইছেন আনামুল— সরাসরি প্রশ্ন বিসিবিকে

আট জনের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার আনামুল হক বিজয়। লাইভ ভিডিও করে তিনি বোর্ডের কাছে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন।

আনামুলের বক্তব্য—
“আমাকে বাদ দেওয়া হল কেন? যদি আমি দোষী হই, তাহলে সেটার প্রমাণ দিন। আমি ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, ই-মেল করেছি— কোনও উত্তর পাইনি। যদি আমি সত্যিই ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত থাকি, তাহলে আমাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে দিন। কিন্তু যদি দোষী না হই, তবে এই হারানো সম্মান ফেরাবে কে?”

তাঁর দাবি— ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়েও তাঁর সন্দেহ রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, একজন জাতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বোর্ডের কাছ থেকে স্বচ্ছতা আশা করা তাঁর অধিকার।

বিসিবির অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

বোর্ডের তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও ক্রিকেট মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে—
এভাবে সরাসরি প্রমাণ চাইলে বিসিবি কি তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হবে? নাকি অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর গৃহীত সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে বোর্ড?

বিপিএলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তাই দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য কঠোর সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে— মাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়াটা কতটা ন্যায়সংগত?

শেষ কথা

বিপিএলের নতুন মৌসুম শুরুর আগেই আট ক্রিকেটারকে ছেঁটে ফেলা নিঃসন্দেহে বড় বার্তা দিচ্ছে— দুর্নীতির জায়গা আর নেই। কিন্তু সেই সঙ্গে আনামুলের মতো ক্রিকেটারের প্রশ্নও গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।

এখন দেখার বিষয়, বিসিবি কি তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা সন্দেহের তথ্য প্রকাশ করবে, নাকি সিদ্ধান্তে অটল থেকে সেই আলোচনাকে থামিয়ে দেবে। যতই হোক, সামনের দিনগুলোতে এই বিতর্কই হয়তো বিপিএলকে আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাবে।

Read more

Local News