Monday, December 1, 2025

বিপদসীমার উপর যমুনার জলস্তর, বন্যায় বিপর্যস্ত দিল্লি-পঞ্জাব

Share

বন্যায় বিপর্যস্ত দিল্লি-পঞ্জাব

দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে অবিরাম বৃষ্টি এবং যমুনার উত্তাল স্রোত। নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। ঘরবাড়ি হারিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। হরিয়ানার হাতিকুণ্ড বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় পুরনো রেলওয়ে ব্রিজ সংলগ্ন যমুনার জলস্তর রেকর্ড করা হয় ২০৭.৪৮ মিটার, যা বিপদসীমা ২০৫.৩৩ মিটারের অনেক উপরে। এর ফলে বুধবার ভোর থেকেই অন্তত ৪০টি ট্রেন বাতিল করতে বাধ্য হয় রেল কর্তৃপক্ষ। ৩৪টি ট্রেন ঘুরপথে চলাচল করছে, আবার ২৫টি ট্রেনকে সংক্ষিপ্ত রুটে চালানো হচ্ছে। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত পুরনো রেলব্রিজ এলাকায় ট্রেন পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ।

দিল্লি-এনসিআর জুড়ে জারি করা হয়েছে বন্যা সতর্কতা। যমুনার জল ইতিমধ্যে বহু নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। মঙ্গলবার যমুনা বাজার ও আশেপাশের এলাকায় কোমরছোঁয়া জল দেখা গিয়েছে। ময়ূরবিহারের কাছে তৈরি হওয়া ত্রাণশিবিরও বন্যার জলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এমনকি দিল্লির ঐতিহাসিক নিগমবোধ শ্মশানও জলের নিচে। নয়ডার বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। রাজস্ব দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ৮,০১৮ জনকে নিরাপদ তাঁবুতে সরিয়ে আনা হয়েছে এবং ২,০৩০ জনকে ১৩টি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে যমুনার জলস্তরের বৃদ্ধির হার। মঙ্গলবার সকালেই জল বিপদসীমা স্পর্শ করেছিল। বৃহস্পতিবার তা আরও বেড়ে ২০৭.৪৮ মিটার ছুঁয়েছে। এভাবে জল বাড়তে থাকলে খুব শীঘ্রই ২০২৩ সালের রেকর্ড ২০৮.৬৬ মিটার ভেঙে দেবে যমুনা। ফলে রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

বৃষ্টির দাপট এখানেই থামছে না। বৃহস্পতিবারও দিল্লি-এনসিআরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গুরুগ্রামের বহু এলাকা ইতিমধ্যেই জলমগ্ন।

এদিকে, পঞ্জাবের পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সেখানে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গিয়েছে ২৩টি জেলা। এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত তিন দশকে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি পঞ্জাববাসী। বৃহস্পতিবারও সেখানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি রয়েছে।

হরিয়ানার হাতিকুণ্ড বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় রাজধানী অঞ্চলের নদীগুলির জলস্তর দ্রুত বেড়েছে। নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণশিবিরে খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বন্যার জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

যমুনার এই ভয়াবহ স্রোত এবং লাগাতার বৃষ্টিতে উত্তর ভারতের বহু রাজ্যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, আর প্রশাসন সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে দিল্লি ও পঞ্জাববাসীর সামনে এখনও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

Read more

Local News