Thursday, January 30, 2025

বিদ্রোহীদের দমন করতে আরাকানে ‘শয়তানের সেনা’ নামাচ্ছে চিন!

Share

আরাকানে ‘শয়তানের সেনা’ নামাচ্ছে চিন!

মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি চিনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, নির্মীয়মাণ ‘চায়না-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডর’ (সিএমইসি)-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় চিন অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করেছে। রুশ ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’-এর আদলে আরাকানে যৌথ নিরাপত্তা সংস্থা তৈরির পরিকল্পনা করছে বেজিং।

যৌথ নিরাপত্তা সংস্থার পরিকল্পনা

চলতি বছরে মায়ানমারের সামরিক সরকার জুন্টা এবং চিন একটি সমঝোতা চুক্তি করার পথে এগিয়েছে। পরিকল্পনা হলো, এমন একটি সংস্থা তৈরি করা, যা সিএমইসি-তে বিনিয়োগকৃত চিনা সম্পদকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে রক্ষা করবে। গত ২২ অক্টোবর চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে জুন্টা সরকার। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এটিকে চিনের সমর্থিত বেসরকারি সেনাবাহিনী গঠনের প্রথম পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন।

সিএমইসি প্রকল্প এবং এর কৌশলগত গুরুত্ব

চিনের বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ)-এর আওতায় অন্যতম বড় প্রকল্প হলো সিএমইসি। এটি কুনমিং থেকে আরাকানের রাখাইন রাজ্যের কিয়ুকপিউ বন্দরের সঙ্গে সড়ক, রেলপথ এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে। এই প্রকল্প সফল হলে চিন ভারত মহাসাগরের একটি বিকল্প প্রবেশপথ পাবে। মলাক্কা প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে এটি চিনের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

তবে প্রকল্পের কাজকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা। ২০২১ সালে জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে ‘জনগণের প্রতিরক্ষা যুদ্ধ’ ঘোষণা করার পর থেকে বিদ্রোহীদের আক্রমণে চীনা বিনিয়োগ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিদ্রোহীদের দমন এবং নতুন সংকট

২০২১ সালে আরাকানের একটি নিকেল প্রসেসিং প্ল্যান্টে হামলার কারণে চিনের ৮০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বছরের শুরুতেও ম্যান্ডালেতে চিনা দূতাবাসে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে চিন যৌথ নিরাপত্তা সংস্থা গঠনের জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেয়।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগে অনেকগুলো জটিলতা রয়েছে। মিয়ানমারের সংবিধানে বিদেশি সৈন্য মোতায়েন নিষিদ্ধ। এ কারণে সংস্থাটি আংশিকভাবে মিয়ানমার-ভিত্তিক হলেও এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে বেজিংয়ের হাতে।

রুশ ওয়্যাগনার গ্রুপের সঙ্গে তুলনা

অনেকেই নতুন সংস্থাটির তুলনা করছেন রুশ ওয়্যাগনার গ্রুপের সঙ্গে। ওয়্যাগনার গ্রুপ মূলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে পরিচালিত একটি বেসরকারি সেনাবাহিনী। এটি সিরিয়া, চেচনিয়া এবং ইউক্রেনের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তবে মিয়ানমারের প্রস্তাবিত নিরাপত্তা সংস্থা পুরোপুরি বেজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। ফলে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

দ্বিমুখী স্বার্থ এবং চ্যালেঞ্জ

চিন এবং মিয়ানমারের যৌথ উদ্যোগে গঠিত এ নিরাপত্তা সংস্থায় দু’পক্ষের ভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। মিয়ানমার সরকার চায়, সংস্থাটি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে অংশ নিক। অন্যদিকে, বেজিংয়ের লক্ষ্য শুধুমাত্র সিএমইসি প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই স্বার্থের সংঘাত সংস্থাটির কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ উদ্যোগ বিদ্রোহীদের দমনে সাময়িক সাফল্য আনতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। যৌথ সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ বিদ্রোহীদের আক্রমণে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অমূলক নয়।

বেজিং এই উদ্যোগ সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও, মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের শক্তি এবং কৌশলগত অবস্থানের কারণে সিএমইসি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।

Read more

Local News