Sunday, November 30, 2025

বিতর্কে রাজভবন: রাজ্যপালের মন্তব্য ঘিরে থানায় তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ

Share

রাজ্যপালের মন্তব্য ঘিরে থানায় তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ!

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মন্তব্য ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। বারংবার উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং সাংবিধানিক সীমালঙ্ঘনকারী মন্তব্যের অভিযোগ তুলে তৃণমূল সাংসদ এবং আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ হলেন। বুধবার তিনি কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, রাজ্যপাল বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন মন্তব্য করেছেন, যা নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং আইনত অপরাধ।

কল্যাণের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৫ নভেম্বর রাজভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল মন্তব্য করেছিলেন— “রাজ্যের নির্বাচন প্রক্রিয়া হিংসা ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। না হলে পশ্চিমবঙ্গ তার মর্যাদা ফিরে পাবে না। ব্যালটে ভোট ফেরাতে হবে।” কল্যাণের দাবি, এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যপাল নির্বাচনী দায়িত্বে হস্তক্ষেপ করছেন এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে রাজ্য প্রশাসনকে কটাক্ষ করছেন।

এর পর ১৭ নভেম্বর এক ইংরেজি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল বলেন— “পশ্চিমবঙ্গে মানুষের রক্তে হোলি খেলার ঐতিহ্য রয়েছে।” এই মন্তব্যে কল্যাণ অভিযোগ করেন, হোলির মতো পবিত্র উৎসবকে অপমান করা হয়েছে এবং হিন্দু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে উস্কে দেওয়ার মতো মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল।

শুধু তাই নয়, ৮ অক্টোবরের একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যও তুলে ধরেন কল্যাণ। যেখানে রাজ্যপাল পুলিশের বিরুদ্ধে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশই আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করছে। পুলিশের একাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং রাজনীতির দ্বারা পরিচালিত।” কল্যাণের বক্তব্য, এটি মিথ্যা, প্রমাণবিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই মন্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ২ জুলাই রাজ্যপালের আরও একটি মন্তব্যের উল্লেখও করেন তিনি। যেখানে বোস বলেছেন— “শাসক নিষ্ঠুর হলে হিংসা বাড়ে। পশ্চিমবঙ্গে রোজ হত্যাকাণ্ড হচ্ছে।” কল্যাণের দাবি, এ ধরনের মন্তব্যে ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি হয়, যা আইনত দণ্ডনীয়।

অভিযোগপত্রে কল্যাণ রাজ্যপালের পাশাপাশি রাজভবনের উপসচিব সুমন পালের ভূমিকাও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS)–এর ১৭৩(১) ও ১৭৩(২) ধারায় মামলা নথিভুক্ত করার অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে রাজভবনও নীরব নেই। শনিবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কল্যাণের মন্তব্য, যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন— “রাজভবনে বোমা-বন্দুক মজুত আছে, বিজেপির অপরাধীরা আশ্রয় পাচ্ছে।” সেই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল রাজভবন। সোমবার রাজভবনের ভিতরে চিরুনি তল্লাশি চালানো হয় পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলকে নিয়ে। কিছুই না পাওয়ার পরে রাজ্যপাল কল্যাণকে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেন। পরে কল্যাণের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মঙ্গলবার মামলা হওয়ার পর দিনই আবার পাল্টা আক্রমণ হিসেবে অভিযোগ দায়ের করেন কল্যাণ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যপাল–তৃণমূল সংঘাত নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার রাজনৈতিক প্রভাব আরও বাড়তে পারে আগামী দিনে।

Read more

Local News