Thursday, December 4, 2025

বিতর্কের চাপেই পিছু হটল কেন্দ্র: আর বাধ্যতামূলক নয় ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ প্রি-ইনস্টল

Share

আর বাধ্যতামূলক নয় ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ প্রি-ইনস্টল!

ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতিটি স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করার যে নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকার ২৮ নভেম্বর জারি করেছিল, তা নিয়ে শুরু থেকেই প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল প্রযুক্তি মহল, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে। অবশেষে চাপের মুখে সুর নরম করল মোদী সরকার। বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হল— স্মার্টফোনে আর বাধ্যতামূলক নয় ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করা, প্রত্যাহার করা হল পূর্ববর্তী নির্দেশ।

সরকারি বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এই অ্যাপের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ফোন সংক্রান্ত প্রতারণা থেকে ব্যবহারকারীদের সতর্ক রাখা। যদিও অ্যাপ নিয়ে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে সরকার এ-ও জানিয়েছে— গ্রাহকেরা চাইলে নিজের ফোন থেকে যে কোনও সময় অ্যাপটি মুছে ফেলতে পারবেন। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ ব্যবহারকারী অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন বলে কেন্দ্রের দাবি। দৈনিক প্রায় ২০০০টি প্রতারণার অভিযোগ অ্যাপের মাধ্যমে জমা পড়ছে বলেও জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত দিনে যেখানে ৬০ হাজারের মতো ডাউনলোড হতো, বিতর্কের আবহে এক লাফে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লক্ষে পৌঁছয়।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল— কেন জোর করে প্রতিটি স্মার্টফোনে একটি সরকারি অ্যাপ ঢোকানো হবে?
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক সব মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছিল, নতুন ও পুরনো সব মডেলের স্মার্টফোনেই সফ্টওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ‘সঞ্চার সাথী’ ইনস্টল করতে হবে। সেই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই গ্রাহকদের ফোনে অ্যাপটির ডাউনলোড লিংক পৌঁছতে শুরু করেছিল। অভিযোগ উঠতে থাকে— এই অ্যাপের মাধ্যমে সরকারের নজরদারি বাড়তে পারে, গ্রাহকের ব্যক্তিগত ডেটা ও গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও তীব্র সমালোচনায় নামে। কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অ্যাপটির তুলনা টানেন কুখ্যাত ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’-এর সঙ্গে, এবং সরাসরি এটিকে ‘স্নুপিং অ্যাপ’ বলে আখ্যা দেন। তাঁর অভিযোগ— এই অ্যাপ বাধ্যতামূলক করা হলে সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ফোন ব্যবহারকারীরা অজান্তেই সরকারি নজরদারির আওতায় চলে আসবেন।

স্মার্টফোন শিল্পমহলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জানা গিয়েছে, অ্যাপল ও স্যামসাং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠকের আবেদন জানিয়েছিল। তাঁদের মতে, সরকার যে নিয়ম জারি করেছে তা কার্যকর করা বহু ক্ষেত্রে সম্ভব নয় এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়— অ্যাপল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে বর্তমান নির্দেশিকাটি তারা কোনওভাবেই সমর্থন করবে না।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বলা হয়েছিল, মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে ১০০ দিনের মধ্যে অ্যাপ প্রি-ইনস্টল সংক্রান্ত অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তবে শিল্পমহলের আপত্তি, আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ এবং রাজনৈতিক চাপ— সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত মোদী সরকারকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতেই হল।

শিল্পমহলের একাংশের মতে, এই পিছু হটার নেপথ্যে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলির চাপই মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে। কারণ, এমন নজিরবিহীন নির্দেশ কার্যকর করা হলে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিত।

অবশেষে কেন্দ্রের সংশোধিত অবস্থান স্পষ্ট— ‘সঞ্চার সাথী’ বাধ্যতামূলক নয়, স্বেচ্ছায় ডাউনলোড করা যাবে, ব্যবহারকারীর ইচ্ছাতেই তা চালু বা বন্ধ থাকবে। বিতর্কের জেরে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আপাতত প্রযুক্তি মহল ও গ্রাহকের স্বস্তির কারণ হয়েছে।

Read more

Local News