মায়ের ফাঁসির রায় নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন সজীব ওয়াজেদ জয়!
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায় যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। রায় ঘোষণার পর থেকেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তাঁর অভিযোগ স্পষ্ট—এ রায় কোনওভাবেই ন্যায়বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নগ্ন উদাহরণ। বিচারপ্রক্রিয়া, আইনশৃঙ্খলা, সাংবিধানিকতা—সবকিছুকেই প্রশ্নের মুখে তুলেছেন জয়।
সোমবার ট্রাইব্যুনাল জানায়, গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-যুব আন্দোলনের সময় ‘গণহত্যার নির্দেশ’ দেওয়ার অভিযোগে হাসিনা দোষী। সেই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই রায় ঘোষণার পর আমেরিকায় অবস্থানরত জয় ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন—এই রায়ের সিদ্ধান্ত আগেই তৈরি ছিল। বিচারপ্রক্রিয়া চলেছিল তাড়াহুড়ো করে, আইনি মানদণ্ড উপেক্ষা করে।
জয়ের কথায়, “১০০ থেকে ১৪০ দিনের মধ্যে একটি এত বড় মামলার বিচার শেষ হয় না। এটা যে একটি সাজানো ব্যবস্থা, তা প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট ছিল।” তাঁর অভিযোগ, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংসদের অনুমোদন ছাড়াই আইন বদলেছে—যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং গণতন্ত্রবিরোধী।
হাসিনা গত বছরের ৫ অগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পলাতক অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে বিচার সম্পন্ন হয়েছে—এ বিষয়েও তীব্র আপত্তি তুলেছেন জয়। তাঁর অভিযোগ, মাকে নিজের আইনজীবী বেছে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। আদালত নিজেরাই আইনজীবী নিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, “অভিযুক্তকে নিজের পছন্দের আইনজীবী বেছে নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে বিচার করা মানেই বিচারপ্রহসন।”
জয় আরও জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ‘আইনের শাসন বলে কিছু নেই’। তাঁর মতে, দেশে আইনের শাসন না ফিরলে কোনও আপিলেরই অর্থ নেই। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, আইনি স্বাভাবিকতা ফিরে এলে এই রায় বাতিল হবে।
তাঁর কথায়, “এ রায় ন্যায়বিচারের জন্য নয়। এটি নিছক প্রতিশোধ নিতে দেওয়া হয়েছে।”
জয় অভিযোগ করেন, গত বছরের অশান্তির সময় আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী গ্রেফতার হয়। কিন্তু সেই সময় বহু পুলিশকর্মী নিহত হলেও মামলা হয়েছে শুধু হাসিনাদের বিরুদ্ধে। আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি আইন পাশ করেছে, যাতে সরকারি পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে দায়মুক্তি দেওয়া হবে। ফলে বিচার কাঠামো হয়ে উঠেছে একতরফা।
জয়ের প্রশ্ন, “এক পক্ষ বিচার পাবে, অন্য পক্ষ পাবে না—এটা কোন ন্যায়বিচারের সংজ্ঞা?” তাঁর দাবি, বাংলাদেশে আইনের শাসন না-ফেরায় বিচারব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।
এই তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং রায়ের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন পথে যাবে—তা এখন সময়ই বলে দেবে।

