মন্ত্রীর বক্তব্যের উল্টো পথে সরকারি আইনজীবী
কলকাতা হাই কোর্টে ১৫ বছরের বেশি পুরনো বাসের মেয়াদ বৃদ্ধির মামলা ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। যেখানে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বাসের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে তার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন, সেখানেই সরকারের আইনজীবী ঠিক উল্টো অবস্থান নিলেন!
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলে যেমন অস্বস্তি বেড়েছে, তেমনই বাসমালিক সংগঠনগুলোর মধ্যেও গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
কী ছিল মামলার বিষয়?
পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি বাসমালিকদের একাধিক সংগঠন হাই কোর্টে আবেদন জানায়, ১৫ বছরের বেশি পুরনো বাসের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হোক এবং বাসের স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া চালু রাখা হোক। তাদের যুক্তি, যদি কোনও বাসের যান্ত্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তাহলে শুধু বয়সের কারণে সেটিকে বাতিল করা উচিত নয়।
এই দাবির সপক্ষে সরকারের পরিবহণ দফতরও একপ্রকার সম্মতি জানিয়েছিল। পরিবহণমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন,
“গাড়ির আয়ু নির্ধারিত হওয়া উচিত তার স্বাস্থ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র বয়স দিয়ে নয়। ১৫ বছর পূর্ণ হলেই বাস বাতিল করা যথার্থ সিদ্ধান্ত নয়।”
কিন্তু আদালতে সরকারি আইনজীবীর ভিন্ন মত!
যেখানে পরিবহণমন্ত্রী এবং বাসমালিক সংগঠন বাসের স্বাস্থ্য বিচার করে মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে, সেখানে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে সরকারি আইনজীবী সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নেন।
সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান:
“বাসের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি রাজ্য সরকারের এখতিয়ারে নেই। জাতীয় পরিবেশ আদালত (NGT) এবং সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা চলছে। সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজ্য সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।”
এই বক্তব্য সরকারের আগের অবস্থানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই এই মামলাকে ঘিরে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বাসমালিকদের উদ্বেগ ও আদালতের নির্দেশ
সরকারি আইনজীবীর এই অবস্থানে বাসমালিক সংগঠনগুলো হতবাক ও উদ্বিগ্ন। তারা আশঙ্কা করছে, এই বিভ্রান্তির কারণে ১৫ বছরের বেশি পুরনো বাসগুলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় রাজ্য সরকারকে লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিবহণমন্ত্রী কী বলছেন?
সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান,
“আমাদের অবস্থান বদলায়নি। আমরা এখনও বিশ্বাস করি, গাড়ির আয়ু নির্ভর করা উচিত তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপর। ১৫ বছর পার হলেই বাস বাতিল করা উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু মামলা চলছে, আদালতের রায় হাতে না আসা পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।”
সূত্রের খবর, এই উদ্ভূত সমস্যার সমাধান খুঁজতে পরিবহণ দফতর আইনমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করছে।
শেষ কথা
সরকারের নিজস্ব দুটি শাখা—পরিবহণ দফতর ও আইনজীবী—যেখানে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে, সেখানে বাসমালিক ও সাধারণ যাত্রীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের চূড়ান্ত অবস্থান কী? পরিবহণমন্ত্রী নাকি সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য—কোনটি বাস্তবে কার্যকর হবে?
সকলেই এখন হাই কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
ভারতের উপর পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছেন ট্রাম্প! ঘোষণা করলেন নির্দিষ্ট তারিখও

