Thursday, January 30, 2025

বায়ুদূষণের প্রভাব: হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা বাড়ছে?

Share

হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা বাড়ছে?

বায়ুদূষণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু পরিবেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং আমাদের শরীরেরও নানা অংশে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি সাধন করে। সম্প্রতি, এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বায়ুদূষণ হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে, বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা যেমন পিএম ১০ ও পিএম ২.৫, আমাদের হার্ট ও ফুসফুসে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষণায় জানা গেছে যে, যখন প্রতিদিন প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫-এর পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ এবং ৬০ মাইক্রোগ্রাম অতিক্রম করে, তখন তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পিএম ২.৫, যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম কণা, শ্বাসের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রবেশ করে ফুসফুস, হার্ট এবং মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ মিশে থাকে, যা দীর্ঘদিন ধরে শরীরে জমে গিয়ে নানা ধরনের হৃদ্‌রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

শীতকালে ভারতে বিশেষ করে কলকাতা ও অন্যান্য বড় শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ে। শীতের সময় বাতাসে ভাসমান দূষিত কণার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে হৃদ্‌পেশি ও রক্তনালির ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা দেখা দেয়, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি, ‘দ্য ল্যানসেট’ বিজ্ঞানপত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন যে, বায়ুদূষণ শরীরে গ্যালেক্টিন প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হৃদ্‌পিণ্ডের গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস’ বলা হয়। এই অবস্থায় হৃদ্‌পেশির কার্যক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

বায়ুদূষণ হৃদ্‌রোগে আরও একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে, তা হলো ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদ্‌মিয়া’ বা হৃদ্‌যন্ত্রের অস্বাভাবিক স্পন্দন। আমাদের হৃদ্‌যন্ত্রের নিজস্ব পেসমেকার, যাকে সাইনাস নোড বলা হয়, তা হার্টের প্রতিটি স্পন্দন তৈরি করে। এই সাইনাস নোড যদি কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে হৃদ্‌স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। বায়ুদূষণ এই সাইনাস নোডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকরা জানান, এই ধরনের সমস্যা যদি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তবে তা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।

বায়ুদূষণের প্রভাব থেকে বাঁচতে, চিকিৎসকরা সব সময়েই বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে, যেসব জায়গায় বেশি ধোঁয়া বা ধূলিকণা রয়েছে, সেগুলোতে যাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাড়ির ভিতরে ও বাইরে দু’ জায়গাতেই বায়ুদূষণ থাকে, তাই বাড়ির বাতাসও পরিষ্কার রাখা জরুরি। বাচ্চা বা বয়স্কদের জন্য বাড়ির বাতাসের গুণগত মান ঠিক রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও, দূষণের মাত্রা বেশি এমন এলাকায় বসবাস করলে, বাইরের বাতাস থেকে বাঁচার জন্য এসব সতর্কতা গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের প্রতিদিনের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

Read more

Local News