শেখ হাসিনার গোপন সম্পদ খুঁজে পেল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-র বিরুদ্ধে করফাঁকি ও তথ্য গোপনের অভিযোগের তদন্ত আরও এক ধাপ এগোল। আদালতের নির্দেশে ঢাকার অগ্রণী ব্যাঙ্কের মূল শাখায় তাঁর নামে থাকা দুটি লকার সোমবার খুলে দেখল বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। লকার দুটি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৮৩২ ভরি সোনার অলংকার, যা দেশজোড়া আলোড়ন তুলেছে। এখন সবার প্রশ্ন—এ বার তদন্ত কোন পথে যাবে?
❖ কী কী পাওয়া গেল হাসিনার লকারে?
দিলকুশায় থাকা অগ্রণী ব্যাঙ্কের দুই লকারে ছিল নানা ধরনের সোনার গয়না:
- হার
- বালা
- কানের দুল
- আংটি
- এবং অন্যান্য মূল্যবান অলংকার
সব মিলিয়ে ৮৩২ ভরি সোনা, যার বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। এই পরিমাণ সম্পদ আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখতেই লকার খোলার নির্দেশ দেয় আদালত।
❖ কারা উপস্থিত ছিলেন লকার খোলার সময়?
এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন—
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের আধিকারিক
- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর প্রতিনিধি
- বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লকারে পাওয়া সোনার পরিমাণ ও বিবরণী হাসিনার জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। যদি অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে, তবে করফাঁকির মামলায় নতুন ধারাও যোগ হতে পারে।
❖ শুধু এই দুই লকার নয়—আরও সম্পদ বাজেয়াপ্ত
অগ্রণী ব্যাঙ্কের লকার ছাড়াও হাসিনার নামে থাকা আরও সম্পদ কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছে—
- পূবালী ব্যাঙ্কে থাকা আরও একটি লকার
- একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
- বিভিন্ন নথি ও আর্থিক বিবরণী
সবগুলোতেই করফাঁকি, অর্থপাচার এবং অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়ের প্রমাণ খোঁজা হচ্ছে।
❖ কোন অভিযোগের ভিত্তিতে চলছে তদন্ত?
২০২৪ সালের জুলাই–অগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়। অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে—
- ছাত্রবিক্ষোভ দমনে গণহত্যা
- তথ্য গোপন
- করফাঁকি
- অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই গণহত্যা মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।
❖ বাংলাদেশের দাবি: হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হোক
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই হাসিনা ভারতে সাময়িক আশ্রয়ে রয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই তাঁকে ফেরত চাইতে দিল্লিকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে। ভারত কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে ঢাকা।
❖ তদন্তের পরবর্তী ধাপ কী?
লকারের সোনা জব্দ করা তদন্তের শুরু মাত্র। এখন যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হতে পারে—
- সোনার উৎস অনুসন্ধান
- উপহার?
- বৈধ ক্রয়?
- নাকি অঘোষিত আয়ের ফল?
- আয়কর ও সম্পত্তির বিবরণীর সঙ্গে তুলনা
- গড়মিল প্রমাণিত হলে অতিরিক্ত কর, জরিমানা বা ফৌজদারি মামলা চলবে।
- অন্য লকার ও সম্পদের অনুসন্ধান
- আরও অঘোষিত সম্পদ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
❖ উপসংহার: হাসিনার আর্থিক গোপনীয়তা ভাঙছে একে একে
লকারে এত বিশাল সোনা মিলেছে—এতে হাসিনার আর্থিক আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। করফাঁকি ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত এখন স্পষ্টতই কঠোর পথে এগোচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি উত্তপ্ত, তদন্তের গতি তীব্র—এই সোনার হদিশ নিঃসন্দেহে আগামী ক’দিনে আরও বড় খবর তৈরি করবে।

