রুক্মিণী মৈত্রের কত্থকের জাদু
বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন রুক্মিণী মৈত্র। তাঁর অভিনীত ও নৃত্য পরিবেশন করা গান ‘কান্হা’, যা সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘বিনোদিনী: একটি নটীর উপাখ্যান’-এর অংশ, দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। সিনেমাটির পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায় এবং রুক্মিণী নিজেই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে শেয়ার করলেন এই সাফল্যের নেপথ্য গল্প।
চার বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফল
নটী বিনোদিনী দাসীর জীবনী নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে গুর্মুখ রায়ের সামনে কত্থক পরিবেশন করেন বিনোদিনী। এই দৃশ্যের জন্য রুক্মিণীকে ধ্রুপদী নৃত্যের কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। রুক্মিণী বললেন, “শুরুতে আমি খুবই ভীত ছিলাম। ছয় মিনিটের এই গানের জন্য শুটিংয়ে কোনও কাট নেওয়া হত না। প্রতিবার পুরো গান ধরেই নাচতে হত। এখন মনে হচ্ছে, এই পরিশ্রম সার্থক।”
চার বছর আগে থেকেই তিনি নৃত্যের প্রস্তুতি শুরু করেন। তাঁর গুরু মনীষা বসু এবং সৌভিক চক্রবর্তী তাঁকে কত্থকের সূক্ষ্মতা শিখিয়েছেন। কোরিওগ্রাফিতে তাঁদের সহায়তা করেন আভিয়ান রায়। রুক্মিণী বলেন, “নাচের অভ্যাস করতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছি। ঘুঙুরের ধাতব অংশে পা কেটে গেছে, হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছি। কিন্তু থামিনি।”

রামকমলের কল্পনা ও পরিচালনার মুন্সিয়ানা
সিনেমার পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায় নিজেই গানটির কথা লিখেছেন। শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে প্রাণবন্ত এই গান দর্শকদের কাছে নতুন এক অনুভূতি জাগিয়েছে। বাংলা ছবিতে হিন্দি গান ব্যবহারের কারণ প্রসঙ্গে রামকমল বলেন, “গুর্মুখ রায় অবাঙালি ছিলেন। বিনোদিনীর হিন্দুস্তানি ধ্রুপদী সঙ্গীত পরিবেশনা তাই স্বাভাবিক। গানের দৃশ্যটির জন্য আমরা কোনও কার্পণ্য করিনি। পোশাক, সঙ্গীত, সেট ডিজ়াইন—সবই নিখুঁত করার চেষ্টা করেছি।”
রুক্মিণীর নৃত্য পারফরম্যান্স এবং গানের চিত্রায়ণে অনেকেই বলছেন, এটি ‘বাংলার ভন্সালী’র কাজ’। রুক্মিণীর সপাট জবাব, “আমি বলব, এটা বাংলার বিনোদিনী।”
দেবের প্রতিক্রিয়া ও রুক্মিণীর অনুভূতি
গান প্রকাশ অনুষ্ঠানে রুক্মিণী মঞ্চে ‘কান্হা’-র সঙ্গে নেচেছেন। তাঁর কাছে এটি “স্কুল জীবনে ফিরে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা।” তাঁর এই প্রচেষ্টাকে অভিনেতা দেবও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রুক্মিণী বলেন, “দেব অনেক আগেই গানটা দেখেছে। ও আমাকে বলল, ‘তোমার পরিশ্রমটাই পর্দায় ফুটে উঠেছে।’ ও খুবই খুশি।”
‘কান্হা’-র সাফল্যের মূলে রুক্মিণীর একাগ্রতা
রামকমল মুখোপাধ্যায় বলেন, “লকডাউনের সময় থেকে রুক্মিণী নাচের চর্চা চালিয়ে গেছে। এমনকি আঘাত পাওয়ার পরেও কাজ বন্ধ করেনি। ওর এই একাগ্রতা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় গানটি ইতিমধ্যেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ছয় মিনিটের একটি দীর্ঘ গান হলেও, দর্শকেরা মন দিয়ে দেখছেন এবং উপভোগ করছেন। রুক্মিণী বলেন, “রিলসের যুগে এত দীর্ঘ একটি গান দেখে দর্শকদের প্রশংসা পাওয়া আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার।”
উপসংহার
‘বিনোদিনী: একটি নটীর উপাখ্যান’ বাংলা সিনেমার নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে বলে মনে করছেন সমালোচকরা। রুক্মিণীর কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে স্পষ্ট। তাঁর অভিনয় ও নৃত্য পরিবেশন এই সিনেমাকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়।
রুক্মিণী এবং রামকমল শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং বাংলা সংস্কৃতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। দর্শকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সিনেমাটি পর্দায় দেখার জন্য। রুক্মিণীর পরিশ্রম ও প্রতিভা আরও একবার প্রমাণ করল, নিষ্ঠা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
এলঅ্যান্ডটি চেয়ারম্যানের মন্তব্যে বিতর্ক! কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত দীপিকা?

