বাংলার সাফল্যের মাঝে ঝাড়গ্রামের প্রশ্নচিহ্ন!
মাওবাদী কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ অভূতপূর্ব সাফল্য দেখালেও, ঝাড়গ্রাম এখনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ জেলার তালিকায় রয়ে গিয়েছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপের তুলনায় বাংলার অবস্থা অনেকটাই ভালো। ২০১০ সালে যেখানে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলা এই তালিকায় ছিল, এখন সেখানে মাত্র ঝাড়গ্রাম রয়ে গেছে। তবে এত সাফল্যের মাঝেও কেন এই জেলা এখনও তালিকায় রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কেন ঝাড়গ্রাম এখনও তালিকায়?
পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল এলাকায় মাওবাদী কার্যকলাপের তুঙ্গে ছিল ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে। সেই সময় ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বীরভূম মাওবাদী ‘উপদ্রুত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে ২০১১ সালে কিষেনজির ‘এনকাউন্টার’-এর পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রাজারাম, জাগরী বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতোর মতো নেতাদের আত্মসমর্পণ মাওবাদী প্রভাব কার্যত নির্মূল করে। ২০১৩-১৪ সালের পরে ঝাড়গ্রামে আর কোনো বড় মাপের মাওবাদী কার্যকলাপ হয়নি।
তাহলে কেন এখনও ঝাড়গ্রাম এই তালিকায় রয়ে গেল? পুলিশের দাবি, মাওবাদী কার্যকলাপকে পুরোপুরি নির্মূল করতে প্রয়োজন সূক্ষ্ম নজরদারি। যদিও ২০২৪ সালের শুরুর দিকে কয়েকটি এলাকায় মাওবাদী পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল, পরে তদন্তে জানা যায় যে, সেগুলো ভুয়ো ছিল এবং সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে আসল মাওবাদীদের কোনো যোগসূত্র নেই বলেই প্রশাসন মনে করছে।

তালিকায় নাম থাকার মাপকাঠি কী?
মাওবাদী প্রভাব নির্ধারণে তিনটি মূল সূচক বিবেচনা করা হয়:
- হিংসাত্মক ঘটনা: সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় কোনো হিংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে কিনা।
- উগ্রপন্থী কার্যকলাপের গোয়েন্দা তথ্য: কোনো মাওবাদী সংগঠনের গোপন কার্যকলাপের উপস্থিতি।
- গণসংগঠনের কার্যকলাপ: মাওবাদীদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন স্থানীয় কমিটির গতিবিধি।
এগুলো মিলিয়ে একটি জেলার ‘উপদ্রুত’ তকমা নির্ধারিত হয়। ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে এসব সূচক সরাসরি দৃশ্যমান না হলেও, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে হয়তো কিছু আভাস পাওয়া গেছে।
সাফল্যের কারণ
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগ মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৫ সালে প্রণীত ‘জাতীয় নীতি ও অ্যাকশন প্ল্যান’-এর মাধ্যমে মাওবাদী নির্মূলের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের অংশগ্রহণ এবং বিশেষ বাহিনীর কার্যক্রমও সাফল্যের অন্যতম কারণ। ঝাড়গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায় মাওবাদীদের গণসংগঠন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা, উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং স্থানীয়দের সঙ্গে নিবিড় সংযোগও মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেছে।
ঝাড়গ্রামের ভবিষ্যৎ
পুলিশ এবং প্রশাসন সতর্ক। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন যে, এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ চলছে। কোনো ধরনের হুমকি বা সন্দেহজনক কার্যকলাপ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে ঝাড়গ্রামকে এখনও ‘উপদ্রুত’ তালিকায় রাখা নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসন মনে করছে, মাওবাদী কার্যকলাপ এখন কার্যত শূন্য। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় তালিকায় নাম থাকা কিছু পুরনো গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে হতে পারে।
জনগণের ভাবনা এবং প্রশাসনের ভূমিকা
ঝাড়গ্রামের মানুষ মাওবাদী হানার সেই অন্ধকার দিনগুলোকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলেছেন। উন্নয়নমূলক কাজ, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের প্রসারে এলাকাটি নতুন দিশায় এগোচ্ছে। মাওবাদী কার্যকলাপ প্রায় নির্মূল হলেও, প্রশাসনের কড়া নজরদারি এবং গোয়েন্দা রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে।
উপসংহার
ঝাড়গ্রামের তালিকায় থাকা প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতোই রয়ে গেছে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি অনেকটাই স্বস্তিদায়ক, তবে সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের একত্রিত প্রয়াসে এই অঞ্চল আরও নিরাপদ এবং উন্নত হবে, এটাই আশা।
সইফ আলি খান: ৬টা কোপ, শিরদাঁড়ার পাশেই গভীর ক্ষত সইফের, অবস্থা কি আশঙ্কাজনক?

