বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) ঘোষণা করেছে যে, আগামী রবিবার তারা বিশ্বজুড়ে বিশেষ ‘শান্তি প্রার্থনা’ এবং কীর্তনের আয়োজন করবে। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন: বর্তমান প্রেক্ষাপট
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের নানা অভিযোগ উঠে আসছে। সম্প্রতি ইসকনের প্রাক্তন সদস্য চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর তাঁকে চট্টগ্রামের আদালতে পুনরায় পেশ করা হবে। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ইসকন জানিয়েছে, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের অধিকার এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার প্রচেষ্টায় তারা তাঁর পাশে রয়েছে।
চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি ও প্রেক্ষিত
চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ছিলেন সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র, যা বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠনের মিলিত প্রয়াস। ইসকন থেকে তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে ইসকন বাংলাদেশ জানিয়েছে, তাঁকে সমর্থন থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়নি। চট্টগ্রামের এক সমাবেশে তাঁর ডাকে হাজার হাজার সংখ্যালঘু জমায়েত হয়েছিলেন। সমাবেশের পর তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় এবং পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
চট্টগ্রামে অশান্তি ও হামলা
চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর তাঁর সমর্থকরা চট্টগ্রাম আদালতের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশি হস্তক্ষেপে সংঘর্ষ বাঁধে, যার ফলে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়। এমনকি চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় একটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। মন্দির সংলগ্ন দোকান এবং বাড়িঘরেও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য ভারত বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। দিল্লি জানিয়েছে, সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্ব। ব্রিটেনের সংসদেও বিষয়টি উঠে এসেছে। ব্রিটেনের কনজারভেটিভ সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং লেবার পার্টির পরিচালিত ব্রিটিশ সরকারকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসকনের শান্তি প্রার্থনা: বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ
ইসকনের এই শান্তি প্রার্থনা এবং কীর্তনের আয়োজন বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে ইসকনের মন্দিরগুলিতে হবে। ভক্তদের নিকটবর্তী মন্দিরে গিয়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসকন মনে করে, এই শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং তাদের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন জোরদার করবে।
বাংলাদেশের সরকারের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন। তারা বলেছে, অন্য দেশের হস্তক্ষেপ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ইসকনের বিশ্বব্যাপী ‘শান্তি প্রার্থনা’ এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মানবাধিকারের দাবিকে নতুন করে উজ্জীবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।