Monday, February 24, 2025

বাংলাদেশের রাজনীতির প্রভাব এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনীতির সমীকরণ

Share

বাংলাদেশের রাজনীতির প্রভাব

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, সন্ন্যাসীদের গ্রেফতার, এবং ধর্মীয় উত্তেজনার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের রাজনৈতিক লাভের হিসেব কষছে। এটি তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশলগুলিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে বাধ্য করছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরোধীদের আন্দোলন

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলির রাজনৈতিক আন্দোলন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। একসময় আরজিকর আন্দোলনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্লোগানের প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। তখন বিরোধীরা “দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ” স্লোগান তুলেছিল। তবে আরজিকর আন্দোলন এখন নিস্তরঙ্গ হয়ে পড়েছে। নতুন করে বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা আন্দোলনে নামছে।

বিজেপি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ নিয়ে সরব। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, এই ইস্যুতে জনমতকে সংগঠিত করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা এই ইস্যুকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করতে পারেন। তবে আন্দোলন ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সিপিএম ও কংগ্রেসের কৌশল

বাংলার বিধানসভায় সিপিএম ও কংগ্রেস প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তবু, এই দুই দল বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছে। সিপিএম বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। ৬ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দিবসের মিছিলের মধ্য দিয়ে তারা বিষয়টি তুলে ধরেছে। অতীতে কলোনি এলাকার হিন্দু ভোট সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল, যা বর্তমানে বিজেপির দখলে। সিপিএম সেই হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।

কংগ্রেসও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এবং অন্যান্য নেতারা সায়ন ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছেন, যিনি বাংলাদেশে হামলার শিকার হয়েছিলেন। কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো বিজেপির সমর্থনঘেরা এলাকাগুলিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। তবে, কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিজেপি সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করছে এবং ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে।

তৃণমূলের অবস্থান

বাংলাদেশের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে তৃণমূলের অবস্থান কিছুটা দ্বৈত। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রের অবস্থানকেই সমর্থন করবেন। একই সঙ্গে, তিনি বাংলাদেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তি বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। এই কৌশল দুই বাংলার সংখ্যালঘুদের সমর্থন ধরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

তৃণমূলের অনেক নেতা মনে করছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ালে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না। কারণ, মমতার শাসনকালে তারা নিরাপদ বোধ করেন। তৃণমূলের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, বিজেপি যাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় হিন্দু ভোট মেরুকরণের সুযোগ না পায়।

প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা এবং রাজনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে ভারতের কিছু প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা বিরোধী দলের আন্দোলনে অক্সিজেন জুগিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়গুলির প্রচার জনমনে উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে সক্রিয় করেছে। বিজেপি, সিপিএম, এবং কংগ্রেস, প্রত্যেকেই এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল সাজিয়েছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া হামলার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় আনতে পারে। বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুকে রাজনৈতিক লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে, আন্দোলন এবং ভোটবাক্সের ফলাফল এক নয়। সিপিএম ও কংগ্রেস নিজেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে চাইছে, বিজেপি হিন্দু ভোটকে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছে, আর তৃণমূল দুই বাংলার সংখ্যালঘুদের সমর্থন ধরে রাখার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। এই সমীকরণে শেষ পর্যন্ত কোন দল লাভবান হবে, তা নির্ভর করবে ভোটারদের প্রতিক্রিয়ার উপর।

Read more

Local News