Monday, February 24, 2025

বাংলাদেশের জেল পালানো জঙ্গিরা ভারতে ঢুকে পড়েনি তো? শঙ্কায় ভারতীয় গোয়েন্দারা

Share

বাংলাদেশের জেল পালানো জঙ্গিরা

বাংলাদেশে চলমান অস্থির পরিস্থিতি এবং সেখানকার জেল ভাঙা পালানো বন্দির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এক গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছেন—এমনটা কি হতে পারে, যে জেল থেকে পালিয়ে আসা জঙ্গিরা ভারতেও প্রবেশ করে নাশকতার পরিকল্পনা করছে?

গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া শয়ে শয়ে বন্দি এখনও পলাতক। বাংলাদেশের কারা বিভাগের সাম্প্রতিক তথ্যে জানা গেছে, এসব পালানো বন্দির মধ্যে অন্তত ৭০ জন কুখ্যাত জঙ্গি রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লা বাংলা’র মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য। এই তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের জন্য ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন, এসব জঙ্গি হয়তো সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে।

ভারতীয় গোয়েন্দারা এই নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলছেন। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের বিষয়টি তাদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অঞ্চলের সীমান্ত দীর্ঘ এবং অনেক জায়গায় কাঁটাতারহীন, যা অপরাধী এবং জঙ্গিদের জন্য অনুপ্রবেশের সুবিধা তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্ধকারে কিংবা নদী পেরিয়ে, কাঁটাতারহীন এলাকায় সহজেই সীমান্ত পার হওয়া সম্ভব। আর সেই সুযোগে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জঙ্গিরাও ভারতে প্রবেশ করতে পারে, যাদের উদ্দেশ্য হতে পারে নাশকতা বা নতুন জঙ্গি নেটওয়ার্ক গঠন।

সম্প্রতি, কলকাতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রেফতারি ঘটেছে। সেলিম মাতব্বর নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার কাছ থেকে ভারতীয় ভুয়ো পাসপোর্ট এবং আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তার কাছে দুইটি জাল আধার কার্ড পাওয়া গেছে, যার ঠিকানা ছিল নদিয়া এবং দিল্লি। এটি আবার একটি নতুন উদ্বেগের কারণ। প্রশ্ন উঠছে, যে ভুয়ো নথি দিয়ে বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করছে, সেগুলো কি শুধুমাত্র অনুপ্রবেশকারীদের জন্য, নাকি জঙ্গিরাও এই সুযোগ নিচ্ছে?

সম্প্রতি কর্ণাটকের চিত্রদূর্গ থেকে পুলিশ ৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। তাদের থেকে জানা গেছে, তারা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতে প্রবেশ করে, এবং কলকাতা থেকে জাল পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে। এরপর তারা কর্ণাটক চলে যায়। এ ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ একটি সাধারণ রুট হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যেই একটি বিপজ্জনক প্রশ্ন উঠে আসে—এই সুযোগ কি জঙ্গিরা নিচ্ছে?

ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা কাঁটাতারহীন, যা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য এক বড় সুযোগ। এই সীমান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোচবিহারের কিছু অংশ, যেখানে প্রায় ৫০ কিলোমিটার কাঁটাতারহীন সীমান্ত রয়েছে। এখানে সহজেই পারাপার করা সম্ভব। এমনকি, জলসীমান্তও কোনো সুনির্দিষ্ট সীমান্ত তৈরি করা সম্ভব নয়, যেহেতু নদী পারাপার এবং জলপথের মাধ্যমে সীমান্ত পেরোনো সম্ভব।

প্রতিবেশী দেশের এমন অস্থির পরিস্থিতি এবং সীমান্তের দুর্বলতা যদি জঙ্গিদের হাতে পড়ে, তাহলে এটি ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হতে পারে। অতীতে যেমন, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লা বাংলা-র মতো জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে নাশকতার চেষ্টা করেছিল, তেমনই এই মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনা তার প্রমাণ। তখন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে জঙ্গিরা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি খুবই সতর্ক হয়ে কাজ করছে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে, এবং বিশেষ করে জাল পরিচয়পত্র বা ভুয়ো পাসপোর্টের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের আটকানোর জন্য নতুন কৌশল তৈরি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ভারতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই, ভারতীয় গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি আরও তীব্র করা উচিত, যাতে জঙ্গিরা সুযোগ না পায় ভারতে ঢুকে নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।

Read more

Local News