বাংলাদেশি জেল থেকে অন্তঃসত্ত্বা সোনালিদের মুক্তি
দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর অবশেষে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেলেন বীরভূমের পাইকর এলাকার বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন, সুইটি বিবি-সহ মোট ছয় জন ভারতীয় নাগরিক। সোমবার চাঁপাই নবাবগঞ্জের আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করার পর সন্ধ্যায় জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে মুক্তি মিললেও তাঁদের চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন এখনও অনিশ্চিত— সবাই এখন অপেক্ষায়, কবে তাঁদের দেশে ফেরানো হবে।
গত জুন মাসে দিল্লিতে কর্মরত সোনালি ও সুইটি-সহ ছয় জনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। পরিবারের দাবি, তাঁদের বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়। ২০ অগস্ট চাঁপাই নবাবগঞ্জ পুলিশ তাঁদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে গ্রেফতার করার পরে থেকেই শুরু হয় আইনি লড়াই। বাংলাদেশের পুলিশের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে তাঁরা জেলে বন্দি ছিলেন প্রায় তিন মাস।
এ দিকে, পুশব্যাকের বৈধতা নিয়ে ভারতে চলেছে মামলা। সোনালির বাবা ভদু শেখ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান তাঁর মেয়ে ও অন্যদের অবিলম্বে দেশে ফেরানোর জন্য। সোমবার মামলার শুনানিতে কেন্দ্র সরকার সময় চাইলে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত প্রশ্ন তুলেন, মানবিকতার খাতিরে সরকার কেন এখনও স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না। আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়— অন্তঃসত্ত্বা সোনালিসহ ছয় জনকে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত নিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতাল এবং নজরদারির ব্যবস্থাও করতে হবে।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অবশ্য যুক্তি দেন, “মানবিক দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনাও বিবেচনা করা প্রয়োজন।” পাশাপাশি রাজ্য সরকারের মতামতও গুরুত্বপুর্ণ বলে জানান তিনি। আদালতে ভদু শেখের আইনজীবী দাবি করেন, সোনালির সঙ্গে তাঁর আট বছরের ছেলেকেও ফেরাতে হবে, কারণ মাতৃসঙ্গ ছাড়া শিশুটির থাকা সম্ভব নয়। আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে বুধবার।
এর আগেই, ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল চার সপ্তাহের মধ্যে ছয় জনকেই ভারতে ফেরানোর। কিন্তু সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্র ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান। হাই কোর্ট নথি ও সাক্ষ্য দেখে সোনালিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব কার্যত স্বীকৃতি দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টও গত শুনানিতে বলেছিল— “জন্মের শংসাপত্র এবং আত্মীয়দের সঙ্গে থাকা— এগুলি নাগরিকত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। বক্তব্য শোনার আগেই তাঁদের পাঠানো হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।”
বাংলাদেশের আদালত থেকে মুক্তি মিলতেই নতুন আশার আলো দেখছেন পরিবার-পরিজন। তবে এ বার মূল প্রশ্ন— কবে তাঁরা ভারতীয় ভূখণ্ডে পুনরায় পা রাখবেন? আইনি পথ এখনও শেষ হয়নি। বাংলাদেশের আদালতের জামিন কেবল প্রথম ধাপ, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হতে প্রয়োজন দুই দেশের প্রশাসনিক অনুমতি।
এই মামলায় শুরু থেকেই সোনালিদের পাশে থেকেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। সোমবার দু’দেশের আদালতের বার্তা তিনি ‘ন্যায়সংগত লড়াইয়ের জয়’ বলে আখ্যা দেন। তাঁর কথায়, “অবৈধভাবে নির্বাসিত করা হয়েছিল তাঁদের। বিজেপির বাঙালি-বিরোধী নীতির ফলেই এই অবস্থা। তবে কবে তাঁদের ফেরানো হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তাঁরা নিরাপদে ভারতে ফিরে না-আসা পর্যন্ত লড়াই চলবে।”

