বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলল দিল্লি পুলিশ?
রাজধানী দিল্লির লোধি কলোনি থানার এক পুলিশ আধিকারিকের চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করায় চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টিকে বাংলা ভাষা এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর পরিকল্পিত আঘাত বলেই দেখছে, অন্যদিকে রাজ্যের বিজেপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে কোনও ভুল দেখতে রাজি নন।
ঘটনার সূত্রপাত, যখন দিল্লি পুলিশ অফিসার অমিত দত্ত একটি অফিসিয়াল চিঠি পাঠান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে। সেই চিঠিতেই বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করা হয়। সেই চিঠি সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত অপমান’ বলে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করার দাবিও জানান তিনি।
তৃণমূলের বক্তব্য, এটা কোনও টাইপোগ্রাফিক ভুল নয়, বরং বিজেপির দীর্ঘদিনের বাংলাবিদ্বেষী মানসিকতার প্রকাশ। অভিষেক বলেন, “এটা সাংস্কৃতিক পরিচয়কে খাটো করার রাজনৈতিক প্রয়াস। বাংলাকে বাংলাদেশ বলার অর্থই হল আমাদের ভারতীয় পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করা।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধুই বাংলা ভাষার অপমান নয়, ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৩ ধারা এবং অষ্টম তফসিলের লঙ্ঘন। বাংলা ভারতের অন্যতম সরকারি ভাষা। ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে কিছু নেই। বাংলা ভাষাকে বিদেশি বলে দাগানো মানে আমাদের অস্তিত্বে আঘাত করা।”
তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও উঠে এসেছে তীব্র প্রতিবাদ— “বাংলা ভাষায় বিশ্বে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ কথা বলেন। ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত একটি ভাষাকে এমনভাবে অপমান করা শুধু ভাষাবিদ্বেষ নয়, এটি কোটি কোটি বাংলা ভাষাভাষীর প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।”
তবে বিজেপির পাল্টা বক্তব্যে কোনও অনুশোচনার ছাপ নেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “ঠিক ভাষাই ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা ভাষা মানে তো একটাই নয়। বাংলাদেশেও বাংলা, পশ্চিমবঙ্গেও বাংলা। তাই ভাষা মিললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যাবে না। বাংলা ভাষায় কথা বললেই তার নাম ভোটার লিস্টে রাখতে হবে— এ যুক্তি মানা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “নকল পরিচয়পত্রের সাহায্যে অনুপ্রবেশ চলছে। এখন তো তা বঙ্গভবনের ভেতরেও ঢুকে পড়ছে। এই নিয়ে রাজনীতি না করে যাচাই করে দেখা উচিত।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও সামনে এল ভাষা ও পরিচয় নিয়ে জাতীয় স্তরের টানাপোড়েন। একদিকে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে অপমান করার অভিযোগ, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিভাজনের ছায়ায় প্রশাসনিক ভুলের প্রতিরক্ষা। এই বিতর্ক নিছক ভুল না কি পরিকল্পিত অপমান— তা হয়তো ভবিষ্যৎই বলবে। তবে বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে বিষয়টি কতটা সংবেদনশীল, তা স্পষ্ট আজকের প্রতিক্রিয়ায়।

