বাংলাকে নতুন সংস্থার আঁতুড়ঘর করার বার্তা
পশ্চিমবঙ্গের স্টার্টআপ সংস্কৃতি গত কয়েক বছরে কিছুটা উজ্জ্বল হলেও, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এখনও পিছিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে, বাংলায় নতুন সংস্থার জন্ম দিতে ও তাদের সঠিক পরিপুষ্টির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, এই পথে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই), যা রাজ্যের উদ্ভাবনী শক্তি এবং স্টার্টআপ ক্ষেত্রের উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। আইএসআই স্টার্টআপদের জন্য অত্যাধুনিক ইনকিউবেশন সেন্টার (আঁতুড়ঘর) পরিচালনা করছে, যা গত দুই বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে আসছে।
এ বছর থেকে এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে, জানালেন আইএসআই ইনকিউবেশন সেন্টারের সিইও অগ্নিমিত্র বিশ্বাস। তার মতে, আগামী দিনে আরও বেশি সংস্থাকে তারা সহযোগিতা করবে, এবং বাংলাকে উদ্ভাবনের এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। উল্লেখ্য, আইএসআই ছাড়াও রাজ্যে আইআইটি, আইআইএমসহ কয়েকটি প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানেও অত্যাধুনিক ‘আঁতুড়ঘর’ রয়েছে, যা স্টার্টআপদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে।
কিন্তু রাজ্যের জন্য এই পথ এখনও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে জানা গিয়েছে, রাজ্যে বর্তমানে ২,১০০টি নতুন সংস্থা রয়েছে, অথচ দেশের মোট স্টার্টআপের সংখ্যা ২.২ লক্ষেরও বেশি। এর মানে হলো, স্টার্টআপ ক্ষেত্রে বাংলা এখনও দেশের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। তবে, আইএসআই-এর ইনকিউবেশন সেন্টারের কাজের পরিসর সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজ্যের উদ্ভাবনী পরিসরকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।

আইএসআই ইনকিউবেশন সেন্টারের অন্যতম কর্তা দেবাশিস ঘোষ জানিয়েছেন, গত দু’বছরে তারা ১৬টি স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন। এদের মধ্যে ৭টি সংস্থাকে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক সাপোর্ট প্রদান করেছে। এবার, তারা অন্তত ২৫টি নতুন উদ্যোগকে সাহায্য করতে চান। সুতরাং, রাজ্যের স্টার্টআপ সংখ্যা ও তাদের সাফল্যের হার বাড়ানোর জন্য আইএসআই আরও তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে, যাতে স্টার্টআপ ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় আরও বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়।
স্টার্টআপ বা নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ এবং পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব। বেশিরভাগ নতুন উদ্যোগ নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে, যেমন, ব্যবসার পরিকাঠামো, প্রযুক্তির ব্যবহার, পুঁজির জোগান ইত্যাদি। এই পরিস্থিতিতে, ইনকিউবেশন সেন্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের উদ্যোগগুলি প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, যাতে তারা টিকতে পারে এবং ধীরে ধীরে সফল সংস্থায় পরিণত হয়।
উদ্যোক্তা দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেছেন, “স্টার্টআপের নিরিখে বাংলা দেশের মধ্যে ১২ কিংবা ১৩ নম্বরে রয়েছে। আরও বেশি সংস্থা সফল না হলে বাংলার স্টার্টআপ সংস্কৃতির এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব।” তবে, তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শুধু প্রযুক্তি নয়, মৌলিক চিন্তাভাবনা এবং উদ্ভাবন ক্ষমতাও জরুরি। বাংলায় তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যবসায় মনোভাবের অভাব রয়েছে, যা রাজ্যের ব্যবসা ও উদ্যোগের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। এখনও অনেক তরুণ চাকরি পাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী, অথচ তারা যদি উদ্যোগপতি হওয়ার দিকে মনোযোগী হতো, তবে রাজ্যের স্টার্টআপ সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হতে পারত।
রাজ্যের এই উদ্ভাবনী শক্তি এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতির পক্ষে আইএসআই-এর পদক্ষেপ একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে। এমন উদ্যোগগুলো থেকে বাংলায় আরও অনেক নতুন সংস্থা উঠে আসতে পারে, যা দেশের স্টার্টআপ তালিকায় শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য রাজ্যকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করবে।
টাকার পতন রুখতে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র?

