Sunday, February 23, 2025

বসিরহাট উত্তরে পোস্টার বিতর্ক: বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘সন্ধান চাই’ দাবি

Share

বসিরহাট উত্তরে পোস্টার

বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার দেখা গিয়েছে, যা এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। পোস্টারটিতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’, যদিও এই নামে দলের কোনও সাংগঠনিক শাখা নেই। পোস্টারগুলি বিধায়কের নিজ এলাকায় মুরারিশা এবং তার আশেপাশে সাঁটানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিধায়ক ভোটের পর থেকে এলাকায় প্রায় দেখা যাচ্ছেন না।

বিধায়কের ছবি সহ পোস্টারগুলোতে লেখা রয়েছে, “এই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি আগে লাল পোশাক পরতেন, পরে সবুজ পোশাকে বদলেছেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” এমনকি বিধায়কের পরিবার থেকেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টারগুলোতে একটি ফোন নম্বরও দেওয়া রয়েছে, যা অজানা। এসব দেখে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে, এই পোস্টার কারা সাঁটিয়েছেন—তৃণমূলের কেউ না কি বিরোধী দলের সদস্যরা।

রফিকুল ইসলাম পূর্বে সিপিএমের বিধায়ক ছিলেন এবং ২০১৬ সালে সিপিএমের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে বিধায়ক হন। পরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ২০২১ সালে আবারও বিধায়ক হন। কিন্তু তাঁর এলাকা তথা দলের কর্মসূচিতে দেখা না যাওয়ার জন্য এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বিধায়ক কিছু প্রচার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন, তবে এর পর থেকে এলাকার কোনো কর্মসূচিতে তাঁর উপস্থিতি নেই।

বিধায়ক রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’ নামে কোনও কমিটি আমি জানি না। এই পোস্টারদাতাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এরা তৃণমূলের সদস্য নয়। আমি এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। আমার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে।” তিনি দাবি করেন যে এই পোস্টার বিতর্ক একটি ষড়যন্ত্র। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আছেন যারা কেবল গালিগালাজ করেন। তাঁদের কথায় সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হবেন না।”

এদিকে, তৃণমূলের হাসনাবাদ ব্লক সভাপতি এস্কেন্দার গাজিকেও এই পোস্টার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সিপিএমের দিকে অভিযোগ চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, “এটি বিরোধীদের চক্রান্ত। কারণ রফিকুল আগে সিপিএমের সদস্য ছিলেন, তাই আমাদের ধারণা সিপিএমের পক্ষ থেকে এই পোস্টার লাগানো হয়েছে।” ব্লক সভাপতি এই বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন যে পোস্টারের সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক রয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে বিধায়ককে এলাকার মধ্যে দেখা না যাওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন এস্কেন্দার। তিনি জানান, গত ৩০ অক্টোবর বিধায়কের নিজের বুথে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন না। যদিও বিধায়কের দাবি, তিন দিন আগে তাঁর ব্লক সভাপতির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

এই পোস্টার বিতর্ককে সিপিএম নেতা সুবিদ আলি গাজি ‘তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি আসলে তৃণমূলের ভেতরের অশান্তির ফল। সামনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন রয়েছে, তাই রফিকুল যাতে প্রার্থী হতে না পারেন, তার জন্যই এই ক্ষোভ। সিপিএম এই ধরনের রাজনীতিতে যুক্ত নয়।”

এই পরিস্থিতিতে বসিরহাট উত্তরের রাজনৈতিক অঙ্গনে একাধিক প্রশ্ন এবং উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের অভ্যন্তরে যে অন্তর্কলহ চলছে, তা কি নির্বাচনের আগে দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে? এ সবই এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চিন্তায় রয়েছে।

Read more

Local News