Sunday, February 23, 2025

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের র‌্যাগিং মামলায় আইনজীবী কেন নেই? মুখ্যসচিবকে জুনিয়র ডাক্তারের ইমেল

Share

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের র‌্যাগিং

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের র‍্যাগিং মামলায় এখন এক নতুন নাটক শুরু হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর ইশা পালসহ সাত জন ছাত্রের বিরুদ্ধে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। এর পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রদের কলেজ এবং হস্টেলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানানো হলে, আদালত আপাতত ছাত্রদের ক্লাসে অংশগ্রহণের অনুমতি দিলেও, হস্টেলে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কলেজের পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী কেন আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই প্রশ্ন তুলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। তাদের দাবি, গত কয়েকটি শুনানিতে কলেজের পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিল না, ফলে কলেজের বক্তব্য আদালতে সঠিকভাবে পেশ করা সম্ভব হয়নি। জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, ৫ অক্টোবর, ৭ অক্টোবর এবং ৫ নভেম্বরের শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু ৮ নভেম্বরের শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী আদালতে জানান, কলেজের পক্ষ থেকে সওয়াল করার কোনো দায়িত্ব তার নেই। এর পর ১১ নভেম্বরের শুনানিতে আদালত কলেজকে তাদের বক্তব্য পেশ করার নির্দেশ দেয়।

রবিবার, ১০ নভেম্বর, জুনিয়র ডাক্তারেরা রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে একটি চিঠি পাঠান, যাতে তারা অভিযোগ করেন, শুনানিতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আদালত জানাতে পারছে না। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, প্রথম শুনানির দিন ৫ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কলেজের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। ৮ নভেম্বরের শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী জানিয়ে দেন, কলেজের পক্ষে বক্তব্য রাখার কোনো ক্ষমতা তার নেই, এবং পরবর্তীতে কলেজের পক্ষ থেকে কোনো হলফনামাও জমা দেওয়া হয়নি। এতে অভিযুক্তদের পক্ষেই সুবিধা হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, যদি ১১ নভেম্বরের শুনানিতে কলেজের পক্ষ থেকে আইনজীবী না আসেন, তবে তাদের বক্তব্য পেশ করা সম্ভব হবে না, এবং এই কারণে কলেজের ‘হুমকি সংস্কৃতি’ আরও বাড়তে পারে। জুনিয়র ডাক্তারেরা দাবি করেছেন, কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী উপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে পারে এবং কলেজের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য না আসার অবস্থা এড়ানো যেতে পারে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে গত কয়েক মাসে একাধিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ। জুনিয়র ডাক্তারেরা অভিযোগ করেছেন, কিছু সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের উপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করছেন। এই অভিযোগের পর স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ও অভীক দে-দের সাসপেন্ড করে। এমন পরিস্থিতিতে, কলেজের পক্ষ থেকে আইনজীবী না আসার বিষয়টি আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যখন কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন ধরনের গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

এই মামলা নিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়ছে, কারণ র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ প্রমাণিত হলে শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। তবে, এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারেরা আশা করছেন, আগামী ১১ নভেম্বরের শুনানিতে কলেজের পক্ষ থেকে আইনজীবী উপস্থিত হলে তারা নিজেদের দাবি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবেন, এবং এই মামলার সঠিক পরিণতি আসবে।

সেই সঙ্গে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে সাসপেন্ড হওয়া ছাত্রদের ভবিষ্যৎ এবং কলেজের শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এই সকল বিষয়গুলোও নজর রাখার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Read more

Local News