বন্ধ হয়ে যাবে কেটিএম?
ভারতে বাইকপ্রেমীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় মোটরবাইক ব্র্যান্ড কেটিএম। উন্নত নকশা, শক্তিশালী ইঞ্জিন, এবং রেসিং পারফরম্যান্সের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত অস্ট্রিয়ার এই সংস্থা। তবে, এত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে কেটিএম। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়ল এই বিখ্যাত বাইক সংস্থা?
কেটিএমের প্রতিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তা
১৯৩৪ সালে অস্ট্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় কেটিএম। প্রাথমিকভাবে সাইকেল তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও শীঘ্রই তারা মোটরবাইকের দিকে মনোনিবেশ করে। উন্নত নকশা এবং রেসিং বাইক তৈরির জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভারতেও কেটিএমের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ভারতের বাজারে কেটিএম বাইক মানেই গতি এবং আধুনিকতার মিশ্রণ।
সংকটের শুরু কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা অতিমারির সময় থেকেই কেটিএমের আর্থিক সংকট শুরু। অতিমারির সময় বাইকের উৎপাদন থামায়নি সংস্থাটি। ফলে অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে প্রচুর বাইক অবিক্রিত থেকে যায়। বর্তমানে প্রায় ৩ লক্ষ কেটিএম বাইক বিভিন্ন গুদামে জমে রয়েছে।
এছাড়া, অতিমারির সময়ে কেটিএম অত্যাধুনিক সাইকেল তৈরিতেও মনোযোগ দেয় এবং এর জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নেয়। কিন্তু সেই সাইকেল বিক্রিতে আশানুরূপ সাফল্য পায়নি তারা। এর ফলে ঋণের বোঝা বেড়েছে এবং ক্ষতির মুখে পড়ে সংস্থা।
প্রযুক্তিগত সমস্যার প্রভাব
কেটিএমের কিছু জনপ্রিয় মডেলে ‘ক্যামশ্যাফ্ট’ সমস্যার জন্য বাইকের গুণমান নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এই সমস্যা ইঞ্জিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যা গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। এর প্রভাব বাইকের বিক্রিতে পড়ে।
ভারতে বজাজের ভূমিকা
কেটিএমের মূল সংস্থা পিয়েরের মোবিলিটি এজি। তবে কেটিএমের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ভারতীয় কোম্পানি বজাজ অটোর কাছে। ভারতে কেটিএমের কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্বেও রয়েছে বজাজ।
বজাজ অটো জানিয়েছে, কেটিএমের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন বা আর্থিক সংকটের ফলে তাদের ব্যবসায় কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি কেটিএম এই সংকট কাটাতে ব্যর্থ হয় এবং অস্ট্রিয়ার কারখানা বন্ধ হয়, তাহলে এর প্রভাব ভারতীয় বাজারেও পড়তে পারে। কারণ, কেটিএম বাইকের গবেষণা এবং উন্নয়নের কাজ অস্ট্রিয়ায় হয়।
সংস্থার পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টা
কেটিএম জানিয়েছে, তারা অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তহবিল সংগ্রহ এবং বিনিয়োগ আনতে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই চীনা অটোমোবাইল সংস্থা সিএফ মোটো কেটিএমে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে, না হলে কার্যক্রম বন্ধ করার শঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেটিএম রেড বুলের মতো বড় সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা করেছে, তবে সেই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বজাজের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা
কেটিএম যদি বজাজের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেয়, তবে বজাজের দখল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এমনকি পুরো সংস্থার নিয়ন্ত্রণ বজাজের হাতে চলে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। ভারতীয় বাজারে কেটিএমের চাহিদা বজায় রাখতে বজাজ বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন বাইক এবং ভবিষ্যৎ
দেউলিয়া হওয়ার খবরের মধ্যেও কেটিএম ভারতীয় বাজারে বেশ কিছু নতুন মডেল লঞ্চ করেছে। ১৩৯০ সুপার ডিউক আর, ৮৯০ ডিউক আর, ১২৯০ অ্যাডভেঞ্চারসহ আরও কিছু মডেল বাইকপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।
শেষ কথা
কেটিএমের এই সংকট গ্রাহক এবং বাইকপ্রেমীদের জন্য একটি দুঃসংবাদ। যদিও ভারতীয় বাজারে বজাজের উপস্থিতি কেটিএমকে টিকে থাকতে সহায়তা করতে পারে, তবুও আন্তর্জাতিক স্তরে এই বিখ্যাত ব্র্যান্ডের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আগামী কয়েক মাস কেটিএমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে এই প্রিয় বাইক সংস্থা।