Friday, February 7, 2025

বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন হাসিনা! গুমকাণ্ডে দিল্লির যোগও খুঁজে পেল মুহাম্মদ ইউনূসের তদন্ত কমিশন

Share

বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন হাসিনা?

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে গুম এবং বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন। সম্প্রতি সেই তদন্ত কমিশন একটি রিপোর্টে দাবি করেছে, শেখ হাসিনার শাসনকালে গুম হওয়া অনেক ব্যক্তিকে ভারতে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়েরও সম্ভাবনা রয়েছে।

তদন্ত কমিশনের কাজ এবং প্রাথমিক আবিষ্কার

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিশন তাদের রিপোর্টে তুলে ধরেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে গুম করেছে। কমিশনের রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গুমের ঘটনার পেছনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এই বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে মানুষদের আটক করা হতো এবং তাদের অনেককে গোপনে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকা

কমিশনের রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে কিছু বন্দিকে ভারতে পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি মামলা হলো— সুখরঞ্জন বালি এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের ঘটনা।
সুখরঞ্জন বালি, যাকে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে অপহরণ করা হয়েছিল, পরে ভারতের কারাগারে পাওয়া যায়। একইভাবে, ২০১৫ সালে ঢাকা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল সালাউদ্দিন আহমেদকে, যাকে পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে দেখা যায়।

তদন্তের সুপারিশ

তদন্ত কমিশনের মতে, এখনও ভারতে বেশ কিছু বাংলাদেশি বন্দি আটকে থাকতে পারে। তারা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র এবং বিদেশ মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে। কমিশন বলেছে, “আমাদের পক্ষে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে কিছু করা সম্ভব নয়। তাই এই বন্দিদের চিহ্নিত করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।”

গুমের সংখ্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যান

কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগের মধ্যে ২৭ শতাংশ মানুষকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যারা ফিরে এসেছেন, তাদের পুলিশের রেকর্ডে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ

তদন্ত কমিশন সরাসরি শেখ হাসিনা এবং তার একাধিক উপদেষ্টা ও মন্ত্রীদের দায়ী করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের অপহরণের পর আটটি গোপন বন্দিশালায় রাখা হত। এর মধ্যে অনেকেই আর ফিরে আসেননি। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

ভবিষ্যৎ করণীয়

তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট, যার শিরোনাম ছিল “সত্য উদ্ঘাটন,” গত সপ্তাহে মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে হাসিনার সরকার এবং তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনার দাবি উঠেছে।

এই ঘটনাগুলি শেখ হাসিনার শাসনকালের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গুমের ঘটনাগুলির ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Read more

Local News