দেশ চালাতে দেশ থেকেই ১৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ?
দেশের অর্থনীতি কি ক্রমশ সংকটের দিকে যাচ্ছে? মোদী সরকারের নেওয়া আর্থিক সিদ্ধান্তে কি সাধারণ মানুষের কপাল পোড়ার সম্ভাবনা? বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রের সাম্প্রতিক ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।
প্রথম ছয় মাসেই ৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ
২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসেই কেন্দ্রীয় সরকার ঘরোয়া বাজার থেকে ৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে এই ঘোষণা করা হয়। জানা গেছে, পুরো অর্থবর্ষে সরকার মোট ১৪.৮২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করবে, যার মধ্যে ৫৪ শতাংশ প্রথম ছয় মাসেই সংগ্রহ করা হবে।
কোথা থেকে আসবে এই টাকা?
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মূলত সোভারেন গ্রিন বন্ড ইস্যুর মাধ্যমেই এই টাকা সংগ্রহ করা হবে। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে অর্থ মন্ত্রক। এছাড়া, ২৬টি সাপ্তাহিক নিলামের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করা হবে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের তিন থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মেয়াদপূর্তির অপশন দেওয়া হবে।
সুদ কত? কীভাবে চলবে বন্ড?
সরকার ঘোষিত নীতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন মেয়াদের জন্য আলাদা সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে:
- ৩ বছর: ৫.৩%
- ৫ বছর: ১১.৩%
- ৭ বছর: ৮.২%
- ১০ বছর: ২৬.২%
- ১৫ বছর: ১৪%
- ৩০ বছর: ১০.৫%
- ৪০ বছর: ১৪%
- ৫০ বছর: ১০.৫%
এছাড়া, সরকারের হাতে থাকবে বন্ডগুলি ফেরত কেনার বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা, যা সুদের হার ও বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হবে।
ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে আরও অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা
২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে কেন্দ্র ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এর মধ্যে,
- ৯১ দিনের জন্য: ৯ হাজার কোটি টাকা
- ১৮২ দিনের জন্য: ৫ হাজার কোটি টাকা
- ৩৬৪ দিনের জন্য: ৫ হাজার কোটি টাকা
আরবিআই-এর ভূমিকা ও রাজস্ব ঘাটতির প্রভাব
দেশের সাময়িক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ওয়েস অ্যান্ড মিনস অ্যাডভান্সেস (WMA) এর সীমা ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ফেব্রুয়ারির বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে সরকারের আয় হবে ৩৪.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা, কিন্তু খরচ হবে ৫০.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। ফলে, ১৫.৬৮ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি থাকবে, যা পূরণ করতে সরকার এই বিপুল ঋণ নিচ্ছে।
ঋণের বোঝা কি সাধারণ মানুষকেই বইতে হবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশাল ঋণের ফলে সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে সাধারণ মানুষের উপর। কারণ:
- ঋণের সুদ মেটাতে কর বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের আয়কেই কমিয়ে দেবে।
- ব্যাঙ্ক ঋণের সুদের হার বাড়তে পারে, ফলে বাড়ি, গাড়ি বা শিক্ষার জন্য নেওয়া ঋণের কিস্তি বেড়ে যাবে।
- মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা পণ্য ও পরিষেবার দাম বাড়িয়ে দেবে।
সরকারের সাফাই বনাম সমালোচনা
সরকারের দাবি, দেশের মোট জিডিপির মাত্র ৪.৪% ঋণ নেওয়া হবে, যা খুব বেশি নয়। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এটি আর্থিক দায়িত্ব ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন (FRBM Act) লঙ্ঘন করছে, যেখানে বলা হয়েছে, সরকার জিডিপির ৩% এর বেশি ঋণ নিতে পারবে না।
শেষ কথা
এই বিশাল ঋণ ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একদিকে সরকার বলছে, এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, অতিরিক্ত ঋণের বোঝা সাধারণ মানুষকেই বইতে হবে। এখন দেখার, এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে উন্নত করবে নাকি আরও দুর্বল করে দেবে!
প্রেমের ইঙ্গিত না গোপন বার্তা? দেবচন্দ্রিমার ‘জিবলি’ ছবিতে রহস্যময় প্রেমিক!