বইপাড়ায় নববর্ষের রূপান্তর!
কলেজ স্ট্রিট, বা বইপাড়া, বাঙালির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক অমূল্য অংশ। তবে সময়ের সঙ্গে বদলেছে এই অঞ্চলের ভূগোল, চরিত্র এবং নববর্ষ উদ্যাপনের ধারা। এক সময় যেখানে ডাবের শরবত ছিল জনপ্রিয়, আজ সেখানে আধুনিক পিওডি বা কোল্ড ড্রিঙ্কের ছড়াছড়ি। এক সময় বই প্রকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল পয়লা বৈশাখ, কিন্তু আজকের দিনে বই প্রকাশের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বইমেলা।
অপু (শুভঙ্কর) দে, যিনি ‘দে’জ পাবলিশিং’-এর অন্যতম কর্ণধার, স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন বাংলা নববর্ষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিল কলেজ স্কোয়্যারের চড়কের মেলা। তবে এখন সেই মেলার সজ্জা আর আগের মতো নেই। বইপাড়ার নববর্ষও বদলে গিয়েছে।”
প্রকাশনা শিল্পের প্রথম ধাপ ছিল কলেজ স্ট্রিটের ‘বেঙ্গল মেডিক্যাল লাইব্রেরী’, যেখানে ডাক্তারি বই বিক্রি হত। এরপর শরৎকুমার লাহিড়ী ‘এসকে লাহিড়ী অ্যান্ড কোম্পানি’ খুলেছিলেন, যেখানে নানা বই পাওয়া যেত। কিন্তু সেই সময়ের বইপাড়া ছিল একেবারে ভিন্ন। নববর্ষে প্রকাশকরা ভিড় করতেন ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি বা ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কাছে। তখন পুজো শেষে বইয়ের হালখাতা শুরু হত। আজকাল অবশ্য সেই দৃশ্য নেই।
প্রকাশকদের কাছে পয়লা বৈশাখ ছিল একটি বিশেষ দিন, যেখানে নতুন বইয়ের প্রকাশের জন্য লেখা হতো চুক্তি। অপু দে জানান, “এখন বইমেলা হওয়ার পরে বই প্রকাশের কাজ আরও কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে। মোবাইল ফোন না থাকায় লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন ছিল, তাই পয়লা বৈশাখে চুক্তি করতাম।”
বইপাড়ায় নববর্ষের দিন লেখক-পাঠক একসঙ্গে এসে মিলিত হতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে বইমেলার জাঁকজমক এবং বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলির কারণে পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্য কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। ‘দে বুক স্টোর’-এর কর্ণধার পরেশচন্দ্র দে বললেন, “পূর্বে আমাদের কাছে অনেক পাঠকের ধারবাকি খাতা থাকত, কিন্তু এখন সে রেওয়াজ প্রায় চলে গিয়েছে।”
এখনকার বইপাড়ায় একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। যেমন, এক সময় পয়লা বৈশাখে বই প্রকাশের হার ছিল অনেক বেশি, কিন্তু এখন বইমেলা কেন্দ্রিক প্রকাশনায় সাফল্য এসেছে। ‘প্রতিক্ষণ’ প্রকাশনীর শুদ্ধব্রত দেবও জানিয়েছেন, “এখন বইমেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনা অনেক বেশি, কারণ এখানে একত্রে অনেক বই প্রদর্শিত হতে পারে।”
তবে যাই হোক না কেন, বইপাড়া আজও তার ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। তবে সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু বদল এসেছে—যেমন কোল্ড ড্রিঙ্ক আর পিওডি, যা একসময় কখনোই ছিল না, এখন বইপাড়ায় এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ