মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভীক ও বিরূপাক্ষ
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ঘিরে চিকিৎসা মহলে উঠেছে নানান প্রশ্ন। মাত্র চার মাস আগে সরকারি হাসপাতালে ‘দাদাগিরি’ এবং আরজি কর-কাণ্ডে নাম জড়ানো চিকিৎসক অভীক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। তবে সোমবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তাদের বৈঠকে ফেরত আনা হয়। বিষয়টি চিকিৎসক সংগঠনের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং এর নেপথ্যে আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
চার মাস আগের বিতর্ক
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে এক চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ ওঠে ধর্ষণ এবং খুনের। এই ঘটনার আবহে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছু চিকিৎসকের ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ উঠে আসে। বিশেষত, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ও অভীক দে-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এসএসকেএম হাসপাতালে অভীকের পিজিটি পাওয়ার বিষয়েও বিতর্ক দেখা দেয়। তিনি আরজি কর হাসপাতালে কীভাবে উপস্থিত ছিলেন, সেই প্রশ্নও ওঠে। সরকারি তদন্তে অভীক ও বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের সাসপেন্ড করে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে। পাশাপাশি, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলও তাদের বৈঠকে যোগদান থেকে বিরত রাখে।
সিদ্ধান্ত পাল্টানোর পটভূমি
সোমবার রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এক ঘোষণায় জানায়, অভীক এবং বিরূপাক্ষকে বৈঠকে যোগদান থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তটি তৎকালীন পরিস্থিতির ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছিল, যা আইনসিদ্ধ ছিল না। কাউন্সিলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “এই পদক্ষেপ আমাদের আইনের মধ্যে ছিল না। তখনকার পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”
এরপর অভীক বৈঠকে যোগ দিলে চিকিৎসক সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনা করে। তাদের দাবি, এটি শুরু থেকেই ভাঁওতা ছাড়া কিছুই ছিল না। সংগঠনগুলোর সদস্যরা কাউন্সিলের দফতরের সামনে প্রতিবাদ জানায়। রাতে সেখানে অবস্থান করার পরিকল্পনা করা হয়।
চিকিৎসক মহলের প্রতিক্রিয়া
চিকিৎসকদের সংগঠন “জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস” এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে। তাদের প্রশ্ন, চার মাস আগের গুরুতর অভিযোগের পর কীভাবে কাউন্সিল তাদের পুনর্বহাল করল? এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় সংগঠনের দাবি, পুরো বিষয়টি অনৈতিক এবং স্বচ্ছতার অভাবে পরিপূর্ণ।
বিতর্কের গভীরতা
আরজি কর-কাণ্ডের পর পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তাতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে শৃঙ্খলার প্রশ্ন আরও জটিল হয়ে ওঠে। অভীক এবং বিরূপাক্ষের ভূমিকা নিয়ে চিকিৎসক মহল থেকে সাধারণ মানুষ—সবাই প্রশ্ন তুলেছিল। এখন তাদের পুনর্বহাল ঘটায় আরও একবার মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভূমিকা বিতর্কের মুখে।
উপসংহার
চিকিৎসা পেশায় নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা বারবারই উঠে আসে। কিন্তু এই ঘটনাটি সেই ভাবনার সঙ্গে বিপরীত। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন চিকিৎসকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের আস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও আইনসিদ্ধ সিদ্ধান্ত ছাড়া এই ধরনের বিতর্ক ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে।

